বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক হামলার পর ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মানববন্ধন ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন চলছে।
হামলার প্রায় দু’সপ্তাহ পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কমিটি গঠন ছাড়া কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী মৌসুমীর মতে, ক্যাম্পাসে হামলা নিয়ে প্রশাসন চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে।
“প্রথমে ৩০ তারিখে নুরুকে মারলো। এরপরে কিন্তু দুই তারিখেও হামলা হলো। মাঝে আবার রাশেদকে রিমান্ডে নিল। একটা ঘটনাতেও কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠনমূলক কোনো পদক্ষেপই নাই।”
মৌসুমী বলেন, এসব কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে এবং সমাজবিজ্ঞান, আইন, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে।
শামসুন্নাহার হলের ছাত্রী ও আন্দোলনের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক নাম প্রকাশ না করই বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। মামলা না করার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। সবাই এখন প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে আছে।”
শহীদ মিনারে ২রা জুলাই দফায় দফায় যে হামলা হয় সেখানে আক্রান্ত হন কয়েকজন। ওইদিন হামলায় ব্যাপক পিটুনির শিকার হন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা।
মাসুদ রানার ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানবন্ধন ও ক্লাস বর্জন করে।
মাসুদ রানা বলেন, “যারা আমাকে মেরেছে আমি তাদের চিনি। সব ফুটেজ আছে। মিডিয়ায় দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পরে যে হামলা হবে সেটা কে ঠেকাবে? আমি এ ক্যাম্পাসে একা। আমার পাশে কে দাঁড়াবে?”
ঘটনা প্রবাহ থেকে মাসুদ রানার বিশ্বাস থানাও মামলা নেবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও একচোখা নীতি ধারণ করে আছে বলেই মনে করছেন তিনি।
“শহীদ মিনারে এত মারলো, প্রক্টর নাকি এটা জানে না!” বলেন তিনি।
এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি প্রতিবাদমুখর হয়েছে ছাত্র শিক্ষকরা। তাদের দাবি নিরাপদ ক্যাম্পাস, আটক ছাত্রদের মুক্তি ও হামলার বিচার।
এ পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বলেন, “যারা অ্যাক্টিভিস্ট তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন এমন পন্থা অবলম্বন করছে যে কর্মপন্থাগুলো সাধারণত একটু নিষিদ্ধ আউটফিট যারা তাদের মতো। যেমন আমি আন্তর্জাতিক অনেক উদাহরণ দিয়েছিলাম।”
ক্যাম্পাসে হামলার ব্যাপারে পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটেছে আমাদের ওপর এর দায়-দায়িত্ব বর্তায় সে বিষয়গুলো দেখার। তো আমরা সেটির জন্য একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে।”
তবে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট বা সুপারিশ দেয়ার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এ ধরনের তদন্ত কমিটির প্রতি আস্থার সংকটও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে এ পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। এতে অন্তত আঠারো জন ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছে। অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
দুই মামলায় দুই-দফা রিমান্ডে নেয়া হয়েছে রাশেদ খানকে।
রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন। ডিবি অফিসের সামনে বুধবার বসেছিলেন ছেলের খোঁজ নেয়ার জন্য। তিনি বলেন,
“প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই আবেদন, আমার সন্তানকে আমি ভিক্ষা চাই। তারে পেলে আমি দেশে চলে যাব। আমার মনির আর চাকরির দরকার নাই। আমার মনি দেশে গিয়ে ভ্যান চালায় খাবে। আমার মনিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্ত করে। ”
সালেহা বেগম বলেন, এখনো পরের বাড়ী কাজ করে সংসার চলে তাদের। স্বামী রাজমিস্ত্রি কিডনির রোগে অসুস্থ। রাশেদ খানের বিরুদ্ধে শিবিরের রাজনীতি করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, তার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার পরিবারও কোনো রাজনীতি করে না।
তবে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ফেইসবুক লাইভে এসে রাশেদ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেছেন। সোহাগ বলেন, রাশেদ, নূর জঙ্গির মতো কার্যক্রম চালিয়ে আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছে।
ঢাকায় হামলা এবং রাজশাহীতে তরিকুলকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোতে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা এবং চিহ্নিতদের ব্যাপারে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এ প্রশ্নে সোহাগ উল্টো হামলাকারীদের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন-
“আপনারা বলছেন আন্দোলনকারী কিন্তু আসলে তারা শিবির। একজন শিবির হাতুড়ি নিয়ে এসেছিল। সেটাকে প্রতিহত করেছে সবাই মিলে। ছাত্রলীগ কখনো কাউকে হাতুড়ি দিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে পারে না। হ্যাঁ, যদি বলেন, শিবির পিটিয়েছে, ছাত্রলীগ জঙ্গিকে পিটিয়েছে সেটা সত্য হতে পারে।”
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এখন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকছেন। তিনি নিজেও মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের শিবির ট্যাগ লাগিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও এ নিয়ে কালক্ষেপণ হয়েছে। ঘোষণার প্রায় তিন মাস পর কমিটি গঠনই প্রমাণ করে ছাত্ররা সঠিক পথে ছিল।
“ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলনের পর থেকে ডিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি সবাই তদন্ত করেছে।
সব ভেরিফিকেশন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো গোয়েন্দা সংস্থা শিবিরের সংশ্লিষ্টতা কিন্তু পায়নি।”
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি বাংলা/এসএইচ