বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দীর্ঘ ১০৭ বছর পুরনো বিদ্যুৎ আইনের পরিবর্তন আনছে সরকার। বৃটিশ আমলের তৈরি বিদ্যুৎ আইন, ১৯১০’-এর সংস্কার এনে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বিদ্যুৎ আইন, ২০১৭’ এর অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন এই আইনে বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতার জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল ও ১০ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
বিদ্যুৎ স্থাপনায় অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে নতুন আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্র, বিদ্যুৎ লাইন বা খুঁটি বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নাশকতার মাধ্যমে ভেঙে ফেললে বা ক্ষতিগ্রস্ত করলে বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সরবরাহ লাইন বা যন্ত্রের উপর কোন বস্তু নিক্ষেপ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এটা স্যাবোটাজের আকারে ধরা হয়েছে। এটা স্যাবোটজ বলতে যা বোঝায় সেটা।’
আগের আইনে এই শাস্তি ছিল না, এটাই এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি।
বিদ্যুৎ আইন ১৯১০ সালের। অনেক পুরনো আইন দিয়েই চলছে। সেটাকে আপডেট করার একটা বিষয় ছিল, দীর্ঘদিনের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ সেক্টরেও অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। এজন্য এটাকে পরিমর্জন করে আনা হয়েছে।
আইনে একটি নতুন বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে তা হল- ইনডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর প্রতিষ্ঠান। এটা বিদ্যু ব্যবস্থা সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য সরকার প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি ইনডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর প্রতিষ্ঠা করবে।
ইনডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রবাহ মনিটরিং, সিডিউলিং এবং মেরিট অর্ডার ডেসপাস ও বিতরণ ব্যবস্থা বা কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ন্যায় পরায়নতার ভিত্তিতে লোড বরাদ্দ করবে। মানে লোড ম্যানেজমেন্টের জন্য, কন্ট্রোলের জন্য একটি সংস্থা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে আইনে।
কোনো লাইসেন্সি টেলিফোন লাইনের কোন অংশের মধ্যে সার্ভিস লাইন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে নতুন পূর্ত কর্ম বা এর মেরামত বা বিদ্যমান পূর্ত কর্মের সংশোধন বরতে ইচ্ছুক হলে সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ সংস্থাকে এ কর্মের বিষয়ে উল্লেখ করে নোটিশ দেবে। এরমধ্যে ইন্টারনেট, সাবমেরিন ক্যাবল-ট্যাবল এগুলো সব এরমধ্যে আসবে।
যারা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা্-কর্মচারী, পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) বলেন আর আরইবি (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) বলেন, এদের কোন শাস্তির বিধান ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে এ বিষয়টি আনা হয়েছে। যদি কোন লাইসেন্সি (বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান) কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন দোষ করে বা বিধি লঙ্ঘণ করে তবে শাস্তি পেতে হবে।
সরবরাহ এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে বা বিদ্যুৎ লাইন বা পূর্তকর্ম করলে, আইন বা বিধির কোন বিধান লঙ্ঘণ করলে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলে, ত্রুটিযুক্ত বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করলে সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন বা বিতরণ কাছে নিয়োজিত কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মচারী এই আইনে উল্লেখ করা কোন অপরাধ করেন বা অপরাধ সংগঠনে সহায়তা বা প্ররোচনা বা ষড়যন্ত্র করেন তিনি ওই অপরাধের জন্য দণ্ডিত হবেন।
আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নাই যদি কোন ব্যক্তি এমন অপরাধ করে তবে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নতুন আইনে বিদ্যুৎ চুরির শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা যেটা বেশি হয় সেটি। আগে জরিমানা ছিল ১০ হাজার টাকা।
বিদ্যুৎ চুরি শিল্প প্রতিষ্ঠানে হলে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা বিদ্যুৎ চুরির মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।
কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগে কোন যন্ত্র, ডিভাইস বা কৃত্রিম পদ্ধতি স্থাপন বা ব্যবহার করলে তিনি ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এটা মিটার টেম্পারিং হতে পরে। এক্ষেত্রে আগের আইনে জরিমানা ২০ হাজার টাকা।
বিদ্যুৎ অপচয়ে এক থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড
বিদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চুরি অপসারণ করলে ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোনো যন্ত্রপাতি বা বিদ্যুতের লাইনের সামগ্রী চুরি করা মালামাল দখলে রাখলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস