রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার যে প্রবণতা চলছে তার সঙ্গে সমম্বয় করতে বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এর ফলশ্রুতিতে বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বরাবর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রোববার (৮ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপি খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুৎ বাড়ানোর গণশুনানি।
এর আগে গত বছরের ১৮ মে বিদ্যুতের পাইকারি হারে দাম বৃদ্ধির জন্য গণশুনানি করে বিইআরসি। বিদ্যুতের একক ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) দাম প্রস্তাবের বিপরীতে এ গণশুনানি করে।
সেসময় বিপিডিবি গ্যাসের তৎকালীন মূল্য ধরে তার প্রস্তাবে প্রতি ইউনিটের দাম ৬৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ করার প্রস্তাব করে। কিন্তু পরে গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বেড়ে গেল ৯ দশমিক ১৩ টাকা এবং ১২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেলে ৯ দশমিক ২৭ টাকা করার প্রস্তাব করে বিপিডিবি। এর প্রেক্ষিতে রিভিউ করে গত বছরের ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি।
প্রতি কিলোওয়াট ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়িয়ে জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। এটি কার্যকর হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে। এর ফলে দাবি করা অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হলেও লোকসান থেকে বের হতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেসময়ই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসানের ভয়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিইআরসি’র কাছে।
বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিগুলো গড়ে ১৯ দশমিক ৯২ থেকে ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে সঞ্চালন চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি। রোববার (৮ জানুয়ারি) ও সোমবার (৯ জানুয়ারি) এই দু’দিনব্যাপি রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে প্রস্তাবগুলোর নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সংস্থাটি গড় মূল্যহার ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ তথা এক টাকা ৯০ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে এ হার ৭ টাকা ১৩ পয়সা থাকলেও প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দাম বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৯ টাকা ৩ পয়সা। পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জ ও পোস্ট পেইড গ্রাহকদের জন্য জামানত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া এসব থ্রি ফেজ এলটি গ্রাহকদের জন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর সারচার্জ আরোপসহ আরও কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ বা এক টাকা ৩৫ পয়সা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) গড় দাম ২০ শতাংশ এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নদার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বাল্ক মূল্য বৃদ্ধির অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়ে অর্থাৎ ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে রেখেছি। তবে এর আগে শুনানি হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত যাই নেওয়া হোক, সাধারণ গ্রাহকদের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখা হবে।
এর আগেই অবশ্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা সেটা ভাল বলতে পারবে বিইআরসি। তবে সবাইকে দাম বাড়া কিংবা স্থির থাকার বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে আমরা চাচ্ছি দাম যতটকু সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ