বাংলা৭১নিউজ, মোঃ মনজুর-ই-মওলা সাব্বির, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে অবাধ পুকুর খননের কারণে উপলশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার কারনে মাঠ জুড়ে জন্মেছে কচুরিপানা। তাতে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। আর একটু বেশি বৃষ্টি হলে মাঠের পানি শ্রেণী কক্ষের মেঝেতে উঠে পড়ে। তখন ক্লাশ নেওয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রায় দুই বিঘা জমির খেলার মাঠের ৯৫ ভাগেই জমে থাকে পানি আর সেই পানিতে রয়েছে বিস্তীর্ণ কচুরী পানা। দীর্ঘদিনের রোদে মাঠ থেকে পানি কমে গেলেও থেকে যায় কচুরিপানা।
যার ফলে বছরের কোনদিনই ওই মাঠে খেলতে পারে না শিক্ষার্থীরা। ফলে বর্ষা মৌসুমের বেশীর ভাগ সময়ই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অঘোষিত ছুটি ভোগ করে। আর এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপলশহর ফসলী মাঠে বিশাল জায়গা জুড়ে দুটি পুকুর খননের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই জলাবদ্ধতার। বিদ্যালয় মাঠের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বিলের প্রায় ১ হাজার বিঘা ফসলী জমিতেও সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতার। ফলে সেখানে বছরে তিন ফসলের স্থানে এখন আবাদ হচ্ছে এক ফসলের। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আশে-পাশের ৫ গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক ও তাদের পরিবার।
উপলশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহিন আলমসহ অনেকের অভিযোগ, খেলার মাঠ জলাবদ্ধ থাকায় আমাদের বিদ্যালয়টা কোচিং সেন্টারের মত হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে এসে পড়া শেষে বই গুটিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করা আড্ডা দেওয়া বা খেলা কোনটারই সুযোগ নাই।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উপলশহর গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ ও সানোয়ার হোসেনের অভিযোগ, গত প্রায় ছয়মাস আগে উপলশহর বিলের ফসলী জমিতে পুকুর খনন করেছেন গ্রামেরই মকবুল হোসেন ও ওয়াজ উদ্দিন দুই ভাই। তাদের পুকুরের পাড় বাঁধার ফলে মাঠের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গোটা মাঠের বৃষ্টিসহ সকল ধরণের পানি এসে ভাটি অর্থাৎ উপলশহর বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় সংলগ্ন ফসলী জমিতে জমা হয়। এতে করে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ ফসলী মাঠের প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় স্কুল মাঠ ভরে উঠেছে কচুরী পানায়।
এদিকে শতাধিক প্রান্তিক কৃষক তাদের জমিতে ফসল ফলাতে না পারায় এবং গত বোরো মৌসুমে ধান কাটতে না পারায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন কৃষক পরিবার। মকবুল হোসেনেরা প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামের অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, অবাধে পুকুর কাটায় ও পুকুর পাড়ের বাধের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিদ্যালয় মাঠে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আমাদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তারা এর প্রতিকারে উদ্যোগ না নিলে স্থানীয়ভাবে এর সমাধান করা আদৌ সম্ভব হবে না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে আমি ও কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বিদ্যালয় মাঠ ও ফসলী মাঠের জলাবদ্ধতা পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে আগামী উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনা করা হবে এবং এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস