বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার একদিন পর মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া এলো।
মঙ্গলবার দুপুরে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
জাগপার প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পর নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতেই এই বিশেষ কাউন্সিল হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই রায় সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই, তবে রায়ের যে পর্যবেক্ষণ বিচারকরা দিয়েছেন সেই সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। এই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য কি ছিল শুধু সরকারকে বিব্রত বা ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা নাকি বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা?
৫৭ জন সেনা মুক্তিযুদ্ধেও আমাদের খোয়াতে হয়নি, সেই ৫৭ কর্মকর্তাকে হত্যা করে কে লাভবান হলো, কারা লাভবান হলো?
যারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে চাইল, যারা বাংলাদেশের গর্ব সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে চাইল, কে লাভবান হলো? এ বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই সুষ্ঠু, নির্মোহ, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করা উচিত।
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ হলো বিষয়টা জানাতে? কেন সেদিন অতি দ্রুততার সঙ্গে বিদ্রোহ দমন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হলো না?
কেন সেদিন সিদ্ধান্ত নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করতে হলো। আমি কাউকে দোষারোপ করে চাই না।
এটার (বিডিআর বিদ্রোহ) তো কোনো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। কেন এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর যে তদন্ত রিপোর্ট সেটা প্রকাশিত হলো না, কেন এখন পর্যন্ত একটা যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এলো না? এ জিনিসগুলো আমাদের জানার অধিকার আছে আমরা এ দেশের নাগরিক। প্রত্যেকটির নাগরিকের সেটা জানার অধিকার আছে।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের আগে গোয়েন্দারা কেন সেই সম্ভাবনার তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল- তা তদন্ত করে দেখার সুপারিশ এসেছে পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে।
‘ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে’: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বলতে চাই, একটা সুপরিকল্পিত কাজ চলছে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য।
২০০ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে সব সময় বাংলাদেশের সীমান্তকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত কৃতিত্ব ও গৌরবের কাজ করেছে বলে সর্বত্র স্বীকৃত হয়েছে- এটাকে মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে ফেলা হলো, তার নামটা পরিবর্তন করে দেয়া হলো।
রায়ে বেকসুর খালাস পাওয়া আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে রায়ের মধ্যে দেখছি তোরাব আলী, ১২ জন খালাস।
যার নেতৃত্বে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক হলো দাবি-দাওয়া নিয়ে, যার বাসা ব্যবহার করা হলো তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। আর আমাদের নাসিরউদ্দিন পিন্টু যিনি কিছুদিন আগেও জেলে ছিলেন, জেল থেকে বেরিয়েছেন, তাকে আবার মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই বিষয়গুলোর উত্তর প্রয়োজন।
জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি নেতা অ্যালবার্ট পি কস্তা, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, সহসভাপতি খন্দকার আবিদুর রহমান, আবু মোজাফফর মো. আনাছ, মাস্টার এম এ মান্নান, রকিবউদ্দিন চৌধুরী মুন্না, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম শফিক, শেখ জামালউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, আওলাদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন উদ্দিন হাজারী, শাহজাহান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস