বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে রাজি হননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জেরে তাকে ‘বাংলাদেশ’ চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপি নেতারা।
তাদের অভিযোগ, মমতা পশ্চিমবঙ্গকে আরেকটা বাংলাদেশ’ বানিয়ে ছাড়ছেন। পাশাপাশি এ রাজ্যের সংখ্যালঘু হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তাকে সেদেশে চলে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এজন্য প্যারোডি গান তৈরি করে রাজ্যময় ছড়িয়ে দিয়েছেন।
বিজেপি নেতা ও সমর্থকদের অভিযোগ, তোষণনীতি নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ভোটে আরেকবার নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মমতা। বিভিন্ন জনসভা থেকে তার উদ্দেশে হুঙ্কার ছুড়ছেন বিজেপির নানা পর্যায়ের নেতানেত্রীরা। তারা বলছেন, মনে রাখবেন এটা পশ্চিমবঙ্গ। একে দ্বিতীয় ‘বাংলাদেশ’ বানানোর চেষ্টা করবেন না।
বিখ্যাত লোকগীতি ‘ও তুই লালপাহাড়ির দ্যাশে যা’-র প্যারোডি করে গানও বেঁধেছেন বিজেপি সমর্থকরা। শিরোনাম দিয়েছেন ‘ও পিসি তুই চলে যা, বাংলাদেশে চলে যা’। এটি ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। ইউটিউবেও এই প্যারোডি গানের বেশ কয়েকটি সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে।
চলমান ভোটযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ তা দেখছেন। সেই গানে রাজ্যের মুসলিম সমাজের দিকে ইঙ্গিত করে একটি লাইনও আছে- ‘তুই যে শুধু ওদের দেখিস, তোর জন্ম কোন দ্যাশে রে, জন্ম কোন দ্যাশে?’
সম্প্রতি কলকাতার রেড রোডে ঈদের নামাজে মুসলমানদের সঙ্গে মোনাজাত ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তৃণমূল নেতারা ছিলেন। সেই ছবি এ গানের ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং ‘ওদের’ বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে তা পরিষ্কার।
এভাবে নির্বাচনী প্রচারণাকে সাম্প্রদায়িক করার চেষ্টা চলছে পশ্চিমবঙ্গে। এছাড়া অপর এক ভিডিওতে গানটির সঙ্গে একটি এনিমেটেড সংযুক্ত করা হয়েছে। তাতে মমতাকে মোদির ভাস্কর্যে গিয়ে ধাক্কা খেতে দেখা যায়।
একই গানের আরেকটি ভিডিওতে মমতার বিভিন্ন ধরনের ছবির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে করা একটি প্রতিবাদ সমাবেশের ছবি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হাসিমাখা একটি ছবি একটি ভিডিওতে জুড়ে দেয়া হয়েছে।
মূলত মমতার বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘মুসলিম তোষণে’র অভিযোগ তুলে ধরতেই ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বারবার প্রয়োগ করছে বিজেপি। কারণ, প্রতিবেশী বাংলাদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সাধারণত, মমতাকে পশ্চিমবঙ্গবাসী ‘দিদি’ সম্বোধন করেন। তবে সম্প্রতি ব্যঙ্গ করে তাকে পিসি বলে ডাকছেন। নেপথ্যে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তোলার গুঞ্জন।
ঘটনাক্রমে মূখ্যমন্ত্রীর দলের হয়ে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে এ অভিযোগ উসকে দিয়েছেন দুজন বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস ও গাজী আব্দুন নূর।
ফেরদৌস রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে রোড শো ও ভোটের প্রচার করেন। সেই জেরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে তাকে ভারত ছাড়তে হয়। আর দমদমে তৃণমূলের সৌগত রায়ের হয়ে প্রচারে নেমে একই পরিণতি হয় নূরের। তিনি জি-টিভিতে ‘রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালে অভিনয়ের সুবাদে এখন ওপার বাংলায়ও সমান জনপ্রিয়।
রায়গঞ্জ আসনে বিজেপি প্রার্থী ও রাজ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশি তারকাদের ভোটের প্রচারে নামিয়ে মমতা কী করতে চাইছেন তা বোঝা একেবারেই শক্ত নয়। বাংলাদেশি ও মুসলিম কার্ড খেলে সোজাসুজি রাজ্যের মুসলিম ভোট পোলারাইজ করতে চাইছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিবাজী বসুরায় মনে করেন, মমতার সমর্থনের বড় ভিত্তি রাজ্যের মুসলিম সমাজ। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার ভাষ্য, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট প্রায় ২৭ শতাংশ। এর পুরোটা তৃণমূলের ঝুলিতে গেলে বাদবাকি হিন্দু ভোটের সামান্য অংশ পেলেও মমতার দল জিতবে।
অধ্যাপক বসুরায়ের মন্তব্য, গেল ১০ বছর এ ফর্মুলাতেই পশ্চিমবঙ্গে সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। এখন রাজ্যে হিন্দু ভোট সংহত করতে চাইছে বিজেপি। কার্যত এ কারণেই তাকে বাংলাদেশি বলে গালিগালাজ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করার কারণে বাংলাদেশে মোটেও পছন্দের ব্যক্তিত্ব নন মমতা। অথচ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতার খেলায় তাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা হজম করতে হচ্ছে!
বাংলা৭১নিউজ/এবি