নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চট্টগ্রাম মেডিকেলের ডেন্টাল বিভাগের ডা. এ কে এম রাহাত খানকে সহকারী অধ্যাপক ডেন্টিস্ট্রি পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত ডিগ্রি ছাড়াই তাকে পদায়ন করা হয়। শুধু তাই না, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে ওই পদে বসানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ অক্টোবর ডা. এ কে এম রাহাত খানকে ‘সহকারী অধ্যাপক’ ডেন্টিস্ট্রি পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়েছে। এই পদে বসতে বিএমডিসি স্বীকৃত মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ্ (এম পি এইচ) ডিগ্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাহাত খান বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এই ডিগ্রি নিয়েছেন, যা বিএমডিসি থেকে স্বীকৃত নয়।
এদিকে রাহাত খানকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের পদোন্নতি শর্তাবলির ও চলতি দায়িত্ব বিধিমালা লঙ্ঘন করে।
সরকারি চাকরিজীবীদের পদোন্নতি শর্তাবলির ও চলতি ২০২৩ ধারা-৫ (গ) বলা হয়েছে, চলতি দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পদোন্নতির জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা সংক্রান্ত গ্রেডেশন তালিকা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং এইক্ষেত্রে চাকরি সন্তোষজনক থাকিলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।
ওই বিভাগের জ্যেষ্ঠদের বাদ দিয়ে পদায়ন করা হয়েছে তাকে। এ নিয়ে ডেন্টাল ইউনিটে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এর আগে ২০১৩ সালে তিনি প্রথমবারের মত ডেন্টাল পরীক্ষার টেবুলেশনের দায়িত্ব পান।
অভিযোগ রয়েছে, সেইবারেই তিনি মার্ক বাড়িয়ে দিয়ে এক ছাত্রের কাছে টাকা লেনদেনের সময় ধরা পড়েন।
এছাড়া তার নিজস্ব চেম্বারের রোগীকে সরকারি হাসপাতালে অন্য ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করিয়ে রোগীর কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, তার স্ত্রী ডাক্তার তানজিনা আনোয়ার, যিনি নিজেকে প্রধান উপদেষ্টার আত্মীয় পরিচয় দেন। তিনি হাসপাতালের ডেন্টাল আউটডোরে কর্মরত একজন ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে তাকে খাগড়াছড়ি বদলির ব্যবস্থা করেন।
এদিকে ডাক্তার রাহাত খান নিজের প্রভাব খতিয়ে ডেন্টাল ইউনিটের চারজন শিক্ষকে প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি করেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, ফাইনাল প্রফেশনাল বিডিএস পরীক্ষায় ডা. রাহাতের হুমকির মুখে বিভাগীয় প্রধানকে বাদ দিয়ে ইন্টারনাল এক্সামিনার হিসেবে রাহাতের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে কয়েকবার এক্সামিনার লিস্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য হন ডেন্টাল অনুষদের ডিন। ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধান এক্সামিনার লিস্টে নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা নিতে পারেননি, পরীক্ষা নেন ডা. রাহাত। এই ঘটনায় ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষকদের মাধ্যমে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা বলছেন, কর্মকর্তার নিয়মবহির্ভূত পদায়ন ও সহকারী অধ্যাপক (ডেন্টিস্ট্র) ফিট লিস্ট থেকে নাম বাতিল পূর্বক ইচ্ছাকৃত ভুল/মিথ্যা তথ্য প্রদানের দায়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এ কে এম রাহাত খানকে বলেন, ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি বিএমডিসির স্বীকৃত কিনা আমার জানা নেই।
২০১৩ সালে ডেন্টাল পরীক্ষার টেবুলেশনে মার্ক বাড়িয়ে দিয়ে এক ছাত্রের কাছে টাকা লেনদেনের সময় ধরা পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক আগের কথা। বিষয়টি আমার জানা নেই। তাকে এখন বদলির করার পেছনে আমার হাত নেই। কারণ আমি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ নই।
ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় ডিপার্টমেন্টের প্রধানকে বাদ দিয়ে ইন্টারনাল এক্সামিনার হিসেবে পরীক্ষার নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টার অনুষদের ডিন ডা. রহিম উল্লাহ চৌধুরী এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ওপেন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি দিয়ে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ