কফি হাউজ নিয়ে মান্না দে গান গেয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু বিউটি বোর্ডিং এর কথা কেউ মনে রাখেনি। প্রথম বাংলা ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ এর পান্ডুলিপি রচিত হয়েছে এই বিউটি বোর্ডিং এর আঙ্গিনায়, পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের হাতে ! বিউটি বোর্ডিংয়ের খাবারের অনেক নাম ডাক আজ খাওয়া শেষে লিখতে বসলাম। ভেবেছিলাম শুধু খাবার নিয়েই লিখবো। কিন্তু বিউটি বোর্ডিংয়ের এত এত ইতিহাসের কথা জেনে আর শুধু ফুড রিভিউতেই লেখাটা সীমাবদ্ধ রাখতে পারলাম না। ইতিহাস নিয়েও কিছু লিখতে হলো:
বিউটি বোর্ডিং
কবি-সাহিত্যিকদের কাছে পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিং ছিলো আড্ডার কেন্দ্রস্থল। বাংলাবাজারে বইয়ের মার্কেট পেরিয়ে শ্রীশদাস লেনে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি জমিদার বাড়ি। এর পাশেই দোতলা একটি বাড়ি। লোহার ছোট্ট গেট পেরোলেই ফুলের বাগান।
বাগানের মাঝখানে দুর্বা ঘাসে মোড়ানো ফাঁকা জায়গা, আড্ডাস্থল ! পাশেই অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থা। হলদে-কালচে রঙের বাড়িটির এক কোনায় লেখা রয়েছে বিউটি বোর্ডিং।
বিউটি বোর্ডিং এর ইতিহাস
১৯৪৯ সালের শেষের দিকে প্রহলাদ সাহা ও তার ভাই নলিনী মোহন সাহা তৎকালীন জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের কাছ থেকে ১১ কাঠা জমি নিয়ে সেখানে নির্মাণ করেন এই বিউটি বোর্ডিং। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে। তখনকার সাহিত্য আড্ডার জন্য অনেক স্থান থাকলেও সবার পছন্দের জায়গা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং।
এখানে আড্ডা দিয়েছেন এ দেশের বিখ্যাত সব কবি-সাহিত্যিক, চিত্র পরিচালক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার কিংবদন্তীরা ! দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এই ঐতিহাসিক স্থানে এসেছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু ও পল্লীকবি জসিমউদ্দীন। এসেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান !
১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বিউটি বোর্ডিং’র মালিক প্রলহাদ চন্দ্র সাহা সহ আরো ১৬ জনকে ধরে নিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। প্রহলাদ বাবুর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার চলে যায় কলকাতায়। দেশ স্বাধীন হবার পর কয়েকজন পারিবারিক বন্ধুর ডাকে প্রহলাদ বাবুর পরিবার দেশে ফিরে এসে আবার হাল ধরেন বিউটি বোর্ডিং এর।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক আবুল হোসেনের ফেসবুক পোষ্ট থেকে সংগৃহীত।