বাংলা৭১নিউজ, বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরাঞ্চলের কয়েক শ’ মোটর পার্টস আমদানিকারকের বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) বন্ধ করে দেয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে মোটর পার্টস আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। যশোর কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট ডিভিশন এসব আমদানিকারকদের বিআইএন লক করে দেয়ায় সৃস্টি হয়েছে এ ধরনের অচলাবস্থার।
অনেক আমদানিকারকের পণ্য এরই মধ্যে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে চলে এসেছে। অনেকের পণ্য আবার বেনাপোল বন্দরের গুদামে পড়ে রয়েছে। কিন্তু বিআইএন লক থাকার কারণে তারা এসব পণ্য ছাড় করাতে পারছেন না। একই কারণে নতুন করে কেউ এলসিও খুলছে না। ফলে চলতি মাসের শুরু থেকে সব ধরনের মোটর পার্টস আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছেন কোটি কোটি টাকার রাজম্ব আয় থেকে।
আমদানিকৃত মোটর পার্টস খালাস না হওয়ায় এবং নতুন করে আমদানি না হওয়ায় একদিকে দুই শতাধিক আমদানিকারক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্র¯ত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের মোটর পার্টসের বাজারে।
দেশে মোটর পার্টসের অন্যতম বড় মোকাম যশোর। এখানকার কয়েকশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর দিয়ে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারের পার্টস এবং বাস-ট্রাকের রিকন্ডিশনড ইঞ্জিন ও পার্টস আমদানি করেন। সারা দেশে মোটরসাইকেল পার্টসের মোট চাহিদার পুরোটাই যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। রিকন্ডিশনড মোটর পার্টসের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পর যশোরের মোকামই সবচেয়ে বড়। তাই এখানকার ব্যবসায়ীদের বিআইএন লক হওয়া ও আমদানি বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ছে সারা দেশের মোটর পার্টসের বাজারের ওপর।
যশোর মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির যশোর অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সবুজ বলেন, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৪ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে তাদের রিটার্ন দাখিল করার কথা। কিন্তু কাস্টমসের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাদের অবগত করা হয়নি। মাসখানেক আগে যশোরের আমদানিকারকরা বেনাপোলে তাদের পণ্য ছাড় করাতে গিয়ে বিআইএন লক দেখতে পান। তখন কাস্টমস, ভ্যাট ও এক্সাইজ কমিশনারেট যশোর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাদের জানানো হয়, আগের বছরগুলোর রিটার্ন দাখিল করে বিআইএন সচল করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
সমিতির পক্ষ থেকে ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অঞ্চলের কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যার যা বকেয়া পড়েছে, তার চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে বিআইএন পুনরায় সচল করা যাবে। বাকি টাকা পরে দিতে হবে।
সমিতির সভাপতি শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু অভিযোগ করেন, বগুড়ায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুরনো ভ্যাট নেয়া হচ্ছে না। ঢাকায় প্রতিটি বিল অব এন্ট্রিতে ১০-১৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের বিআইএন চালু করে দেয়া হচ্ছে। অথচ যশোরে সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, যশোরের মোটর পার্টস আমদানিকারকদের সবাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করেন। এ খাত থেকে সরকার বছরে ৩০০-৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগের ভ্যাটের জন্য যে টাকা চাওয়া হচ্ছে, তা পরিশোধ করতে গেলে তারা সবাই পথে বসে যাবে। আমরা পণ্য আমদানির সময় শুল্কের পাশাপাশি ৪ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছি। প্যাকেজ ভ্যাটও দিয়েছি। নতুন করে এখন আরও ৪ শতাংশ ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে।
যশোরের এসএম মোটরসের মালিক মশিয়ার রহমান জানান, তিনি ৫৩ পিস বাস-ট্রাকের রিকন্ডিশনড ইঞ্জিন আমদানি করেছেন, যা এখন বন্দরের গুদামে পড়ে রয়েছে। বিআইএন লক থাকায় তিনি এগুলো ছাড়াতে পারছেন না। আমদানিকৃত পণ্যগুলোর মোট মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা। এগুলো ছাড় করালে সরকার ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব পেত।
ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অঞ্চলের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের তো নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটের টাকা দিতেই হবে। যার যা বাকি পড়েছে, আপাতত তার কিছু অংশ পরিশোধ করে বিআইএন পুনরায় সচল করে নেয়া যাবে। বাকিটা পর্যায়ক্রমে দিতেই হবে।
তিনি জানান, যশোরে মোট ১ হাজার ৬০০ ব্যবসায়ীর বিআইএন লক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যšত ৩৩ জন বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস