পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বায়ু দূষণ এমন একটি বিষয়, যেখানে আমাদের নো কম্প্রোমাইজ। এটা জিরো টলারেন্সের জায়গা। আমরা যেমন বলি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স, তেমনি বায়ু দূষণের ক্ষেত্রেও একইভাবে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমাদের চলতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কারওয়ানবাজার ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত নির্মল ‘বায়ু নিশ্চিত করণ : প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এখানে শুধু পরিবেশ অধিদপ্তর নয়, এটা রোধে সার্বিক বিষয় সবার দিক থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা জরুরি। কারণ এককভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর এখানে কিছুই করতে পারবে না। বায়ু দূষণ একটি নীরব ঘাতক। এটার খারাপ প্রভাব আমরা প্রকাশ্যে বা সরাসরি দেখতে পাই না। কেউ অস্ত্র নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলে, ব্রাশ ফায়ার করতে চাইলে এটা আমি তাৎক্ষণিক দেখতে পাই, কিন্তু এই বায়ু দূষণ যে কীভাবে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করছে এটা আমরা বুঝতেই পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে অনেক কাজ করার আছে। শুধু পরিবেশ অধিদপ্তর এককভাবে এ কাজ করতে পারবে না। উন্নয়নের সংজ্ঞার বিষয়ে আমরা যেভাবে সবাই একমত হই। তেমনি বায়ু দূষণ রোধে আমাদের সবার একমত হয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
২০৪১ সালে আমাদের যে ভিশন আছে, উন্নয়নের ভিশন সেটার সঙ্গে এই বায়ু দূষণ রোধটাকেও রাখতে হবে। বায়ু দূষণ কেন্দ্রিক আমাদের অনেক কাজ বাকি এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে আমাদের এই বায়ু দূষণকে রোধ করতে হবে এজন্য যা যা করণীয় সমস্ত কিছুই যথাযথভাবে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একই মুদ্রার দুটি পিঠ। আবার বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে, এ ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা ত্বরান্বিত করছে। আবার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধারাও বায়ুদূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
প্রতিনিয়তই বায়ুমণ্ডলে জটিল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একে অন্যকে প্রভাবিত করছে। বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি অন্যটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ও শিল্পকারখানায় নির্গত ধোঁয়া প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ও ওজোন নির্গত করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নামেও পরিচিত।
এসব দূষকের মধ্যে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনকে শর্ট লাইভ ক্লাইমেট পল্যুশন বা স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক বলা হয়। এই গ্যাস এবং দূষণগুলো একদিকে যেমন বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। এসব গ্যাস সূর্য থেকে আসা তাপ ধরে রাখে। আবার পৃথিবী তাপ বিকিরণ করে যে ঠান্ডা হবে, তাতেও বাধা দেয় এই গ্রিন হাউজ গ্যাস। ফলে পৃথিবী সময়ের সঙ্গে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। যা বিভিন্ন জলবায়ুজনিত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী।
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, সুইডেন দূতাবাস বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ফাস্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল নোভাক, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন প্রমুখ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ