সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো বাংলাদেশ ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ১৩.৯ শতাংশ: অর্থমন্ত্রী সোনার দাম আরও বাড়লো ব্যর্থতা ঝেড়ে বিশ্বকাপ রঙিন করার প্রত্যাশা জ্যোতির পালিয়ে বাংলাদেশে এলেন আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য এবি ব্যাংক পিএলসি যশোরে স্মার্ট কার্ডে নারী উদ্যোক্তা ঋণ স্মরণে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপে তীব্র তাপপ্রবাহের পর হবিগঞ্জে ঝড়-শিলাবৃষ্টি গুচ্ছের বি ইউনিটের ফল প্রকাশ তাপপ্রবাহ এবারই শেষ নয়, প্রস্তুতি শুরুর পরামর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাওরের প্রায় শতভাগ বোরো ধান কাটা শেষ ২৪ ঘণ্টায়ও নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, সময় লাগবে ২-৩ দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ সরকারি সফরে অস্ট্রেলিয়া গেলেন বিমান বাহিনী প্রধান সরকার তৃণমূল মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে ক্র্যাবের মানববন্ধন উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করুন: রিজভী গ্যাস পাচ্ছেন গোপালগঞ্জবাসী অপারেশনের নামে হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিল্টন সমাদ্দার আশ্রমকাণ্ডে দায় এড়াতে পারেন না মিল্টনের স্ত্রী

বালু বাণিজ্যে কৃষি জমির সর্বনাশ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ৬ মে, ২০১৮
  • ৫১৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, আবু মুসা, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: নিয়ম নীতি ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলার ছোট যমুনা নদী ও এর আশ পাশের ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীর বুকে ড্রেজার ও ফসলি জমিতে যন্ত্র বসিয়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংগৃহীত বালু ট্রাকে ট্রাকে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা। এমনকি নদীর ওপর অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে তারা পাড় থেকেও লুট করছেন ট্রাকে ট্রাকে বালু।

ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার জীব বৈচিত্র, ফসলি জমি এবং বেশ কিছু স্থাপনা। জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকশ্যাম, দুয়ানী ঘাট, ছাওয়ালপাড়া, মাধবের ঘাট এবং পাঁচবিবির চেঁচড়া, বাগজানা, কোকতারা সহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে বালু উত্তোলনের এমন চিত্র দেখা গেছে।

জেলা ভুমি অফিস সুত্রে জানা গেছে,জেলায় জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীতে ১৪টি সরকারি বালু মহাল রয়েছে। নীতিমালা মেনে চলতি মৌসুমে এই ১৪টি বালু মহালের মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে ১১টি ইজারা দেওয়া হয়। যার মধ্যে শর্ত মোতাবেক টাকা পরিশোধ না হওয়ায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোয়ানী-কুটিবাড়ি এবং পাঁচবিবি উপজেলার মাধবের ঘাট ও মৃধাপাড়া বালু মহাল বন্ধ করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ভূমি কর্তৃপক্ষ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মামলার কারণে কাগজে কলমে বালু মহাল তিনটি বন্ধ থাকলেও সেখানেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

সরেজমিনে জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকশ্যাম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,ওই এলাকায় কোন নদী নয় ফসলের জমি থেকে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। ৫-৬টি মেসিতে তখন বালু ভরানো হচ্ছে। প্রতি মেসি বালুর দাম নেওয়া হচ্ছে হাজার থেকে ১১শ’ টাকা। প্রতি দিন ওই এলাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ মেসি বালু বিক্রি করা হচ্ছে। জমি থেকে বালু তোলার কারণে বিস্তির্ণ এলাকা জমি থেকে ৮-১০ ফুট নীচু হয়ে গেছে। ফলে অন্য জমিগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে।

সেখানে কথা হয় বালু ব্যবসায়ী জয়পুরহাট শহরের সাহেবপাড়া গ্রামের জাকির হোসেনের সাথে। তিনি দাবি করেন,মৌসুম চুক্তিতে জমিগুলি ইজারা নিয়ে তিনি সেখানকার বালু বিক্রি করছেন। তবে এটা সরকারি কোন বালু মহাল নয় বলেও তিনি জানান। জাকির জানান,তিনি বর্তমানে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন। চকশ্যামের পাশে জিতারপুর এলাকায় দেখা গেছে ছোট যমুনার পার কেটে নেওয়ার পর পাশের একটি জমিতে মাটি কাটার মেশিন দিয়ে ফসলের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।

সেখানে জানতে চাইলে মাটি কাটার মেশিনের চালক আমজাদ হোসেন জানান, কুশুম নামের জনৈক ব্যাক্তির নিদের্শে তিনি মাটি কাটতে এসেছেন। কুশুমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় দোগাছি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হোসেন ওই জায়গা থেকে মাটি বিক্রি করছেন। তিনি সেই মাটি কিনে সড়কে কাজ করছেন।

যুবলীগ নেতা জাকারিয়া জানান, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তিনি ওই জমি থেকে মাটি বিক্রি করছেন। এ সময় তিনি প্রশাসনের অনুমতি পত্র দেখানোর জন্য সময় নিয়েও আর দেখা করেননি। পরে পাঁচবিবি উপজেলার কোকতারা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনায় গিয়ে দেখা গেছে, নদীর বুকে অস্থায়ী সেতু তৈরি করে সেখানে নদীর পাড় কেটে বালু বিক্রি করছেন ওই এলাকার রতন,আজাদ ও দিলদার নামক তিন বালু ব্যবসায়ী। সেখানে দেখা মেলে জাকির হোসেন নামের এক যুবকের।

জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটি নদীর পাড় হলেও জায়গাটি তাদের পৈত্রিক। তার বাবা জাহেদুল, চাচা জয়বর,আবু, সাইফুল এর মালিক। বালু ব্যবসায়ী রতন,আজাদ ও দিলবর তাদের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে এখানকার বালু বিক্রি করছেন।

বালু ব্যবসায়ী রতন জানান, তাঁরা তিন পার্টনার বৈধভাবে জমি ইজারা নিয়ে বালু বিক্রি করছেন। তবে কোকতারা গ্রামের আব্দুল বারিক বলেন,নদীর পাশে বেশ কিছু সরকারি জায়গায় প্রচুর গাছ ছিল। যেগুলি বৈধভাবে তিনি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। পরে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করায় নদী গর্ভে জায়গা ও গাছগুলো বিলিন হয়ে গেছে।

একইভাবে পাঁচবিবি উপজেলার আটাপাড়া চেঁচড়া ত্রিপুরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নদীর বুকে মেশিন বসিয়ে বোরিং করে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। জানতে চাইলে সেখানের দায়িত্বে থাকা মশিউর রহমান নামের এক যুবক জানান,পাঁচবিবি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিননুর রহমান ঘাটটি ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালু বিক্রি করছেন। মিননুর দেখাশুনা করার জন্য মশিউরকে নিয়োগ দিয়েছেন।

তবে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা হতে সরবরাহ করা বালু মহালের তালিকায় চেঁচড়া ত্রিপুরা বালু মহালের কোন নাম পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন থেকে এ অঞ্চলে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা ফসলের জমি থেকে বালু বিক্রি করার কারণে তাদের জমিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক সময় জমি ধ্বসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রতি বছর সেগুলো মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করে মাটি দিয়ে ভরাট করতে হয়। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও প্রশাসনের সাময়িক ব্যবস্থায় কিছুদিন বন্ধ থাকে। তারপর আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়। সুত্রটি দাবি করেন,বালু ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ক্ষামতাসীন দলের হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

জয়পুরহাট সদরের চকশ্যাম এলাকার কৃষক আব্দুল হাকিম অভিযোগ করেন,‘বালু উত্তোলনের কারণে তাঁর একবিঘা জমির এক পাশ ধ্বসে গেছে। এটি বাঁধতে গেলে কম পক্ষে দশ হাজার টাকা লাগবে। তিনি বলেন,‘বালু কাটা বন্ধের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। শুনেছি মামলাও হয়েছে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বালু কাটা। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কে শুনবে আমাদের কথা।

জয়পুরহাট সদরের ষ্টেশনারী সামগ্রীর পাইকারি বিক্রেতা সাজ্জাত হোসেন বলেন,‘চকশ্যাম এলাকায় তাঁর অন্তত দশ বিঘা জমি আছে। ওই এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে তার জমিগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। যেগুলো ভরাট করতে প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার টাকার মাটি কাটতে হয়।

বাগজানা কুটাহারা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, বাগাজানার কুটাহারা ছোট যমুনা নদীর পাশে তাঁর মুরগীর খামার রয়েছে। ওই নদী থেকে বোরিং করে বালু তোলার কারণে তাঁর খামার শেডে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে ওই এলাকার বেশ কিছু জমি হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি সহ ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বিষয়টি ৫০ জন কৃষক বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে দরখাস্ত করা হয়েছে।

নদী ও জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে যুবলীগের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে,জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রভাষক সুমন কুমার সাহা বলেন,‘যুবলীগের কিছু নেতা বালুর ব্যবসা করছেন,তবে তারা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে এ ব্যবসা চালাচ্ছেন। যুবলীগের কোন নেতা অথবা কর্মী অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে জড়িত নেই’।

জেলা প্রশাসক মো.মোকাম্মেল হক বলেন,‘বালু মহাল ইজারা নিলেও বোরিং করে কেউ বালু উত্তোলন অথবা বিক্রি করলে সেটা হবে দন্ডনীয় অপরাধ। আবার জমি থেকেও বালু উত্তোলন অথবা বিক্রি করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন। তিনি বলেন,অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ বালু ব্যবসা ইতোপূর্বে বন্ধ করা হয়েছে। এখন যদি কেউ আবারও সেটা শুরু করে,তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com