বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
খুলল এস আলমের বন্ধ হওয়া ৯ কারখানা ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল ইউক্রেন বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা মেট্রোরেলের লাইনে ফানুস, রাতভর পরিষ্কার করলো ডিএমটিসিএল হিন্দুরা নয়, আগস্টের পর ভারতে বেশি গেছেন মুসলিমরা বছরের প্রথম দিনে রাজধানীর বায়ু ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ইইউতে ফিরতে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় তুরস্ক ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ১২৮ জন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর যেসব এলাকায় ভূমি বিষয়ক সকল হয়রানি দূর করার অঙ্গীকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সমন্বয়ক গ্রেফতার নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা উচ্ছ্বাস-উল্লাসে নতুন বছর উদযাপন পুলিশের জ্যাকেট পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সাংবাদিক সজীবকে সিলেটের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে রংপুর রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরাতে ফিলিপাইনের সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে কমিশন বদ্ধপরিকর: সিইসি ছাত্রশিবিরের নতুন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ১২ কর্মকর্তা

বামের ধাক্কা, গরমিল জোটের অঙ্কেও

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬
  • ১৪০ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, সন্দীপন চক্রবর্তী, কলকাতা: আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার মতো করে বলতে গেলে বলতে হয়, বনের পাখি এল না। হাতের পাখিটাও উড়ে যাব, উড়ে যাব করল!

সহজ পাটিগণিতের নিয়ম মেনে দুইয়ে দুইয়ে চার হল না বিরোধীদের জন্য। একক ক্ষমতায় তৃণমূলের মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না বুঝেই মতাদর্শগত বাধা ভেঙে এবং বাম শিবিরের মধ্যে বিরোধিতার সুর উপেক্ষা করে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ায় গিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী, অধীর চৌধুরীরাও।

কিন্তু আসন সমঝোতা করে লড়ার পরেও বৃহস্পতিবার দেখা গেল, দু’বছর আগে লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে জোটের মোট প্রাপ্ত ভোট সামান্য কমে গিয়েছে! লোকসভায় আলাদা লড়ে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যা ভোট পেয়েছিল, তার যোগফল ছিল ৩৯%-এর চেয়ে সামান্য বেশি। আর এ বার একসঙ্গে লড়ে জোট পেয়েছে ৩৭.৯% ভোট।

বামেদের নিজেদের ঘরেও ফের ঝড়ের ঝাপ্টা লেগেছে! লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এ বার বামেদের ভোট কমে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ! লোকসভা নির্বাচনে বামেরা পেয়েছিল প্রায় ২৯% ভোট। সে বারের ভোটে জল মিশেছিল বলেও অভিযোগ ছিল। অথচ এ বারের প্রায় ভূতের উপদ্রবহীন নির্বাচনে বামেদের আসনগুলিতে তাদের প্রাপ্ত ভোট হয়েছে ২৫.৬%। যদিও বাম শিবিরের একাংশের মতে, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা থাকায় বামেরা অন্য বারের মতো সব আসনে লড়েনি এ বার। বেশি আসনে লড়ে মোট প্রাপ্ত ভোট আরও বেশি হলে শতাংশের হিসেবও আলাদা হতো।

তবে প্রাথমিক পর্যালোচনাতেই বেরিয়ে আসছে, কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট ছিল বলেই বিরোধী শিবির শেষ পর্যন্ত ৭৭ আসনে পৌঁছতে পেরেছে। আলাদা ভাবে লড়লে এই ভরা তৃণমূলের বাজারে বামেদের দশা আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা ছিল! জোটের জেরে ঈষৎ মানরক্ষা হলেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, সাংগঠনিক ভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে থেকেও কংগ্রেস যেখানে গোটা রাজ্যে ৪৪টি আসন ঘরে তুলতে পারল, বামেরা সেখানে মাত্র ৩৩-এ থামল কী ভাবে? যার মানে দাঁড়াচ্ছে, পাঁচ বছর আগে সরকার হারানোর সময়ে বামেরা যা পেয়েছিল, এ বার তার চেয়েও কম বিধায়ক নিয়ে বিধানসভায় ঢুকতে হবে তাদের!

এর মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ২৬টি আসন। স্বয়ং বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, শমীক লাহিড়ী বা আব্দুস সাত্তারেরা পরাজিত। বামেদের তরফে বলার মতো মুখ বলতে এ বার বিধানসভায় থাকছেন শুধু উত্তরবঙ্গের অশোক ভট্টাচার্য এবং যাদবপুরের সুজন চক্রবর্তী। বাকি শরিকদের মধ্যে আরএসপি তিনটি, ফরওয়ার্ড ব্লক দু’টি এবং সিপিআই মাত্র একটি করে আসন জিতে কোনও রকমে বিধানসভায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে! তারা এখন সিপিএমের জোট-সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ!
বিস্তর গা-জোয়ারির অভিযোগের মধ্যেও গত বছর পুরভোটে কিন্তু ভোটব্যাঙ্কে রক্তক্ষরণ আটকে দিতে পেরেছিল বামেরা।

উপরন্তু বিজেপি-র দিকে চলে যাওয়া ভোটের সামান্য কিছু অংশ ফেরতও এসেছিল। তার ভিত্তিতেই আলিমুদ্দিনের আশা ছিল, বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র বাক্স থেকে আরও বেশি ভোটের ঘর ওয়াপসি হবে। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, লোকসভার তুলনায় বিজেপি-র ভোট কমল ঠিকই। কিন্তু তার ফায়দা পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

যা মেনে নিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা বলছেন, ‘‘মানুষ যা রায় দিয়েছেন, মাথা পেতে গ্রহণ করছি। তবে ১০-১২টি আসনে বিজেপি এবং তৃণমূলের সমঝোতা এই ভোটে বোঝা যাচ্ছে। খড়্গপুরের ফল দেখলে সেটা আরও স্পষ্ট।’’

বামফ্রন্টের মধ্যে কট্টরপন্থী অংশের জোট-আড়ষ্টতা ছিলই। স্বয়ং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নানা সময়ের মন্তব্যেই তার আভাস স্পষ্ট ধরা পড়েছিল। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, জোট যখন হলই, দু’পক্ষের যৌথ বিবৃতি দিয়ে বা ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণা করে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হল না কেন? পরাজয় স্বীকার করতে গিয়ে সূর্যবাবুও মেনে নিয়েছেন, ‘‘মানুষ নির্ণায়ক রায় দিয়েছেন। হয়তো অস্পষ্টতা চাননি।’’ তবে একই সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়ালও অব্যাহত রেখেছেন তিনি। দল ও ফ্রন্টের একাংশ এই নিয়ে তোলপাড় করবেন জেনেও রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘কৌশলগত কোন লাইন বজায় থাকবে, তা দলে আলোচনা করে ঠিক হবে।

তবে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াইয়ে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি একজোট হয়েছিল। মানুষের জোটের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করি না।’’ ভোটের ফল নিয়ে প্রাথমিক ময়নাতদন্তের জন্য শনিবারের রাজ্য কমিটির বৈঠক আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে সূর্যবাবুরা চাইছেন, মমতা যখন বিজেপি-র প্রতি বার্তা পাঠাচ্ছেন, সেই সময়ে এই ‘মানুষের জোট’ অন্তত ২০১৯ পর্যন্ত ধরে রাখতে।

এরই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, জোটের রসায়ন ঘিরে। তৃণমূলকে হারানোর তাগিদে জোট করলেও বাম ও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা সর্বত্র পরস্পরকে ভোট দিয়েছেন কি না, সংশয় তৈরি করে দিয়েছে এ বারের ফলই। ফলপ্রকাশের পরেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং বামফ্রন্টের বৈঠকে নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেসের আহামরি ভোট বা সংগঠন না থাকা সত্ত্বেও বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলায় তারা ইতিউতি আসন পেয়েছে।

অথচ কাগজে-কলমে তার চেয়ে বেশি সাংগঠনিক শক্তি থেকেও বামেরা তেমন লাভ করতে পারেনি। যদিও সূর্যবাবু নিজেদের সাংগঠনিক ঘাটতি আড়াল করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোট অদল-বদল কেমন হয়েছে বা হয়নি, তার জন্য কে দায়ী, পর্যালোচনা না করে বলা সম্ভব নয়। তবে আত্মসমীক্ষা চাই। দোষারোপ করে লাভ নেই।

অনুকূল পরিস্থিতির ফায়দা নেওয়ার জন্য যে সংগ্রাম বা সংগঠন লাগে, তার কতটা ছিল দেখতে হবে!’’ উল্টো দিকে মানস ভুঁইয়া বা আব্দুল মান্নানের মতো জয়ী কংগ্রেস প্রার্থীরা কিন্তু মেনে নিয়েছেন, বামেদের কাছ থেকে শেষ বিন্দু পর্যন্ত সহযোগিতা পেয়েছেন।

বাম শিবিরেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে, ২০১৬ যে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেল, সেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব কি? সূর্যবাবু অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ! বলছেন, ‘‘পরাজয় মানেই পশ্চাদপসরণ নয়। একটা যুদ্ধ হেরে গিয়েছি। কিন্তু লড়াইটা জারি আছে!’’

বাংলা৭১নিউজ/আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com