চীন-আসিয়ান ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন উভয়পক্ষের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এক নতুন দিগন্তের সূচনা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। চীন বলছে, গেল ১৭ বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সহযোগিতার যে নজির স্থাপিত হয়েছে তা এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য মাইলফলক। অনলাইন ও অফলাইনে অংশগ্রহণের সুযোগ কোভিড মোকাবিলা করে ডিজিটাল সিল্ক রোড নির্মাণের পথকে উন্মুক্ত করছে, যা আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে চীনের টেকসই বাণিজ্যের ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংশি ঝুয়াং অঞ্চলের রাজধানী নানিং এ চলছে ১৭তম চীন-আসিয়ান প্রদর্শনী এবং ব্যবসা-বিনিয়োগ সম্মেলন। ৪ দিনব্যাপী এ সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য, চীনের নেতৃত্বে আসিয়ান ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য জোটের মধ্যে অনলাইন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদার করা।
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মানের মধ্য দিয়ে, ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারকরণ’ এই স্লোগানে এবার বাণিজ্য-ডিজিটাল অর্থনীতি-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে চীন। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে সম্পর্ক উন্নয়নে ৪ দফা প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন চীনা প্রেসিডেন্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২১ শতকের সিল্ক রোড বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের আর্থিক কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
এ প্রসঙ্গে চায়না সাউদার্ন পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিউ ওয়েই বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সংযোগ নির্মাণের ব্যাপারে জোর দিচ্ছি। আশা করছি এই উদ্যোগ এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে দারুণ কাজ করবে।
২০০৪ সাল থেকেই বার্ষিক প্রদর্শনীর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন।
ন্যানিং ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে পোর্ট ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান উ শিয়াওজুন বলেন, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বহুমাত্রিক যোগাযোগ জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর আওতায় নতুন আন্তর্জাতিক সড়ক ও সমুদ্রপথে বাণিজ্য করিডোর গড়ে তোলা হবে। গতিশীল করা হবে এ করিডোরের নির্মাণ কাজ। আশা করি এর মধ্য দিয়ে চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও গভীর ও টেকসই হবে।
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৫৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এসব পদক্ষেপের ফলে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ইনস্টিটিউট অব সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ’র প্রধান মা ইয়ং বলেন, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যে ৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন তা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অভিন্ন উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
অনলাইন প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে কোভিড মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ খুলেছে। এই উদ্যোগকে ডিজিটাল সিল্ক রোড নির্মাণে অগ্রগতি উল্লেখ করে সামনের দিনগুলোতে দুপক্ষের সম্পর্ক টেকসই ভিত্তি পাবে বলে মনে করেন তারা।
বাংলা৭১নিউজ/এএম