বাংলা৭১নিউজ, বাগেরহাট প্রতিনিধি: অনুষ্ঠানের নাম হালখাতা (নতুন খাতা)। ব্যবসায়ীরা হালখাতা উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরোনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করাতেন ও নতুন করে তাঁদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এই উৎসব আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা ভূমি অফিসে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমি ‘ভূমি-হালখাতা’।
ঐতিহ্যবাহী সেই হালখাতার আদলে ভূমি উন্নয়ন কার ও অন্যান্য ভূমি রাজস্ব আদয়ে ভূমি-হালখাতা পালনের এই আয়োজন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল আলম। হালখাতা উপলক্ষে অফিস চত্বর সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। পথে পথে করা হয় আল্পনা। জমির মালিকরাও ভূমি উন্নয়ন কর দিয়ে রশিদ (দাখিলা) সংগ্রহের পাশাপাশি কর্মকর্তা আপ্যায়ন গ্রহণ করছেন।
প্রথম বারের মত ভূমি অফিসে এমন হালখানা পাললে এসেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মতর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সাধারণ মানুষ। অনুষ্ঠানে আগতদের দেশি ফল, বাতাসা, কদমা, মুরলি দিয়ে আপ্যান করা হয়।
মোল্লাহারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল আলম বলেন, জনগনের জন্য সেবা প্রাপ্তি সহজ করতে বেতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকে হালখাতা করার চিন্তা আসে। আমার চেষ্টা ছিল ঐতিহ্যকে লালন করে কিভাবে সেবা প্রদান আর রাজস্ব আদায় সহজ করা যায়।
সরকারি ছুটির দিনেও অফিসে এসে সবাই কাজ করছেন। সাধারণ জনগনের কাজ থেকেও খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। ভূমি অফিস নিয়ে অনেকের মাঝেই একটি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সেবা পেতে হয়রানি, দাললের কথা সবাই বলে। আমি এই ধারণা ভাঙতে চেয়েছি। আর এই কাজে আমি অফিসের সহকর্মীসহ সবার সহযোগীতা পেয়েছি।
বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে উৎসব মুখর পরিবেশে অনেকেই এসেছিলেন হালখাতায় অংশ নিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করতে। খাজনা পরিশোধ করেন স্থানীয় উদয়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ হায়দার মামুন বলেন, এভাবে কখনও খাজনা দেই নি। ভূমি-হালখাতায় এসে বছরের প্রথম দিনে আমি আমার জমির খানজা দিতে পেরে খুব আনন্দিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন আল ফারুক বলেন, হালখাতা আমাদের সংস্কৃতির সাথে ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই উদ্যোগটাকেই নতুন ভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। কোন জমি ভোগ দখল করতে দলিল, দখল ও দাখিলা আবশ্যক। আমি মনে করি ভূমি-হালখাতা পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বড়বে।
মোল্লাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর আলম সানা বলেন, এখনকার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজ উদ্যোগে এই আয়োজন করেছেন। আমাদের হালখাতার ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনে তার এই উদ্যোগ সবাইকে কর প্রদানে উৎসাহী করবে। আমরা আশা করি প্রতিবছর এই উদ্যোগ নেওয়া হলে খুব ভালো হবে। পাশাপাশি এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া হলে সরকারে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। প্রসঙ্গত ১লা বৈশাখ সকাল থেকে ওই হালখাতা শুরু হয়েছে। ৭ই বৈশাখ পর্যন্ত চলবে এ ভুমি হালখাতা।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস