বাংলা৭১নিউজ, বাগেরহাট প্রতিনিধি: সিডর-আইলা বিধ্বস্ত বাগেরহাট অঞ্চলে সুপেয় পানির অভাব পূরণে পুনঃখনন করা হচ্ছে ১৬৬টি পুকুর। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এসব পুকুর খনন করে সুপেয় পানি ধারণের উপযোগী করতে কাজ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পুকুরগুলো খননের ফলে এ অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা মিঠবে।সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ‘জেলা পরিষদের পুকুর, দীঘি ও জলাশয়সমূহের পুনঃখনন প্রকল্প’ ও ‘পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্প’র আওতায় এসব পুকুর খনন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১০টি পুকুর খনন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই বাকি পুকুরগুলোর খননও শেষ করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তেলিগাতী সরকারি পুকুর পাড়সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, অনেক দিন ধরেই আমরা টিউবওয়েলের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সরকারি পুকুরটি খননের উদ্যোগে আমরা খুশি। এ পুকুরের ওপর বহু যুগ ধরেই পুটিখালী, পঞ্চকরণ ও তেলিগাতী ইউনিয়নের হাজারো মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু সিডর ও আইলার পর পুকুরটি ভরাট হয়ে যায়। পুকুরটির খনন সম্পন্ন হলে আমাদের বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর হবে।কচুয়া উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের সুমতী রানী বসু বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমরা আলোকদিয়া সরকারি পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করছি।
পুকুরটি খনন হওয়ায় এলাকার শত শত পরিবার উপকৃত হচ্ছে।’এ গ্রামের আরেক বাসিন্দা বাসুদেব বলেন, ‘১৯১৫ সালে এ পুকুরটি খনন করা হয় বলে শুনেছি। ১০০ বছর পর আবারো এটি খনন করা হলো। খননের ফলে আমরা সুপেয় পানি পাচ্ছি।
’শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামলে খনন করা এসব সরকারি পুকুর সংস্কার ও পুনর্খননে এলাকার পানির চাহিদা কিছুটা হলেও মিঠবে।’ লবণাক্ত এ অঞ্চলে সরকারি জমিতে নতুন করে আরো পুকুর খনন করা
প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মোড়েলগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন জানান, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জে টিউবওয়েল থেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে বৃষ্টি ও পুকুরের পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এ দুই উপজেলায় দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫২টি পুকুর খনন করা হচ্ছে। খনন শেষে সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুকুরগুলো কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেয়া হবে।
একই সঙ্গে পুকুরে মানুষ ও পশুর গোসল নিষিদ্ধ করা হবে। তাছাড়া পুকুরপাড়ে নিরাপদ পানি সংগ্রহ ও সরবরাহের জন্য পিএসএফ (পুকুরপাড়ে বালির ফিল্টার) তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসান বলেন, পানি সংরক্ষণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যেই পুকুরগুলো পুনর্খনন করা হচ্ছে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে খননকাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে ১০টি পুকুরের খনন সম্পূর্ণ হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট পুকুরগুলোর খনন সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে যেসব এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করা যায় না, সেখানকার প্রায় ১০ লাখ মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মিটবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস