বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আনা হয়েছে কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর মরদেহ।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ রবিবার (২৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় সেখানে তাঁর মরদেহ আনা হয়। রাখা হবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বুলবুল চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উপস্থিত রয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রমুখ।
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের বাসায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুলবুল চৌধুরী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে এই কথাসাহিত্যিকের। চিকিৎসা চলছিল বাসায়ই। কেমোথেরাপি শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছিল না। চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পীকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন।
গত মে মাসে বুলবুল চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ছোটবেলার গ্রামের স্মৃতি নিয়ে লিখতে চান ‘মেঘমেদুর ছোটবেলা’। মিষ্টি মধুর ছোটবেলা, যে ছোটবেলাটা গ্রামের। শুধু গ্রামের নয়, পুরো মাটির, বিবর্তনের। তাঁর বিশ্বাস, লিখতে পারলে, এটা শুধু তাঁর আত্মজীবনী নয়, বাংলাদেশেরও একটা আত্মজীবনী হবে। আরো জানিয়েছিলেন, ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজার কাহিনি নিয়েও লিখতে চান একটি অনবদ্য উপন্যাস। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় তিনি কাজও করেছেন। ক্যান্সারের কষ্ট ভুলে কাজ দুটি নিয়ে চাঞ্চল্যবোধ করছেন। কিন্তু সেসব আর হলো না।
অতিসাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত বুলবুল চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরে। পড়ালেখা করেছেন সেই সময়ের জগন্নাথ কলেজে। প্রথম লেখা বের হয় ১৯৬৭ সালে। জগন্নাথ কলেজে গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় ‘জোনাকি ও সন্নিকট কেন্দ্র’ গল্পের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। পেশাজীবনের শুরুতে পুরান ঢাকায় ছাপাখানার ব্যবসা ছিল তাঁর। পরে দীর্ঘ সময় সংবাদপত্রে কাজ করেছেন।
সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম আখ্যানকার বুলবুল চৌধুরী। গ্রামবাংলার কাদামাটি মাখা জীবনের ছবি যিনি তুলে আনেন নিজস্ব মহিমায়। তাঁর গল্পের ভাষা সরল, আঙ্গিক প্রচলিত। সেসবের মাঝে গল্প আছে। আবার কিছু গল্প রূপকধর্মী কবিতার মতো রহস্যপ্রবণ। সব কথা তিনি বলতে চান না, পাঠকের কল্পনা আর অনুভবের মাঝে ছেড়ে দেন।
‘টুকা কাহিনী’ গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সাহিত্য জগতে সাড়া জাগান। এরপর লিখেছেন ‘মাছের রাত’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘জলঢুঙ্গী’সহ নানা গ্রন্থ। তাঁর বেশির ভাগ গল্পই সত্য ঘটনা অবলম্বনে। লিখেছেন আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘অতলের কথকতা’। প্রকাশিত হয়েছে ‘নির্বাচিত গল্প’ গ্রন্থ।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রভৃতি।
বাংলা৭১নিউজ/এএম