বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: বাংলাদেশে করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালনকারী প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক এবং ৫৭ জন নার্স প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরূপম দাশ জানিয়েছেন, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে ১২ জন, ময়মনসিংহে সাতজন এবং গাজীপুরের কালিগঞ্জে ছয়জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা অন্যান্য জেলার।’
এ ছাড়া, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ আসা ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিন আছেন বলেও তিনি জানান। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা নিম্নমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামকে (পিপিই) দায়ী করছেন নিরুপম দাস।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “এই সংখ্যা যদি এভাবেই বাড়তে থাকে তবে রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য কোনো ডাক্তার থাকবে না।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হচ্ছেন বংলাদেশে করোনা যুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী প্রথম চিকিৎসক।
এমন অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই আতঙ্কিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা। তাদেরকে করোনা যুদ্ধে ‘সম্মুখ সারির যোদ্ধা’ বলা হলেও পর্যাপ্ত ঢাল-তলোয়ার বা বর্ম পড়িয়ে আগেভাগেই প্রস্তুত না করার কারণে তারা নিজেরাই ঘায়েল হচ্ছেন বলে আক্ষেপ করছেন অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ডাক্তার গোলাম মোস্তফা রেডিও তেহরানকে বলেন, ডাক্তার বাঁচলেই রোগী বাঁচবে। তাই ডাক্তারকেই আগে রক্ষা করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডাক্তার ফায়েজুল হাকিম বলেন, পূর্ব থেকে সতর্ক করা হলেও সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করার কারণেই আজ এমন বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একজন জুনিয়র ডাক্তার নিজেদের আতঙ্কের কথা ব্যক্ত করে রেডিও তেহরানকে জানান, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের উপযুক্ত সুরক্ষা ও তাদেরকে কোয়ারেনটাইনে রেখে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
এ দিকে চিকিৎসকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি দাবিকে পরিহাস করে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট-এর পোস্ট করা একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাতে তিনি লিখেছেন, “গত একমাসে আমার ডিপার্টমেন্টের ৮ জনের জন্য ২টি পিপিই দেওয়া হয়েছে। রোগীর সবচেয়ে কাছে থেকে আমি চিকিৎসা দেই। এখন পর্যন্ত আমিসহ আমার ডিপার্টমেন্টের কেউ একটিও এন-৯৫/কেএন-৯৫/এফএফপি২ মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্থ্য সচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি এন-৯৫ ইকোয়িভেলেন্ট মাস্ক দিচ্ছেন? এই মিথ্যাচারের শাস্তি কী হবে?”
বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: পার্সটুডে