বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ‘ভোরের কাগজ’-এর সম্পাদক শ্যামল দত্তকে হুমকির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ৷ সাংবাদিকরা বলছেন, অনেক সাংবাদিকই আজকাল হুমকি পাচ্ছেন৷ কোনো বাছবিচার ছাড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হচ্ছে৷
গত ২০ ডিসেম্বর দৈনিক ভোরের কাগজ ‘মাদ্রাসার বইয়ে অশ্লীলতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী৷ তারা সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং প্রতিবেদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্যকে হত্যার হুমকি দেয়৷ ওই গোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁদের উকিল নোটিশও পাঠায়৷
সরকার সমর্থক ওলামা লীগ শ্যামল দত্ত এবং অভিজিৎ ভট্টাচার্য্যকে গ্রেপ্তারের দাবি করে প্রেস ক্লাবের সামনে সভা সমাবেশ করেছে৷
একই সময়ে ২০১৬ সালের একটি মানহানির মামলায় শ্যামল দত্ত’র বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে রাজশাহীর একটি আদালত৷ সম্পাদক পরিষদ গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় বৈঠক করে এক বিবৃতিতে শ্যামল দত্তকে হুমকি এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে৷ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘‘ঠুনকো অজুহাতে বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে কর্মরত সম্পাদক ও রিপোর্টারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সমন জারি হওয়া নিয়েও পরিষদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘পরিষদ লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি বিভিন্ন সংস্থা সম্পাদক ও প্রতিবেদকদের তলব করছে এবং প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা চাইছে৷ সম্পাদক পরিষদ মনে করে, এমন চর্চা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং পরিষদ অবিলম্বে এ চর্চা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে৷”
সম্পাদক পরিষদের ওই বৈঠকে সদস্যদের মধ্যে গোলাম সারওয়ার, মাহফুজ আনাম, তাসমিমা হোসেন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মুনিরুজ্জামান, শ্যামল দত্ত, নঈম নিজাম, জাফর সোবহান, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেইন, মতিউর রহমান, আলমগীর মহিউদ্দিন ও ইমদাদুল হক মিলন উপস্থিত ছিলেন৷
সম্পাদক পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সম্পাদক এবং সাংবাদিকরা এখন হুমকি’র মুখে রয়েছেন৷ প্রতিনিয়তই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হচ্ছে৷ সরাসরি হুমকি দেয়া ছাড়াও টেলিফোনে হুমকি দেয়া হয়৷ আমার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘এখানে আমি অথবা শ্যামল দত্ত বিষয় না, বিষয় হলো, সাংবাদিক ও সম্পাদক হয়রানি৷ আমাদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার বিবেচনা না করেই ৫৭ ধারায় মামলা নেয়া হচ্ছে৷ মামলা হলেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে৷ এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না, তা আমি বলছি না৷ তবে হয়রানির জন্য মামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ এই ধরনের হয়রানির ঘটনা অতীতে এত দেখা যায়নি৷ সম্প্রতি এগুলো অনেক বেড়ে গেছে৷ সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের ডাকাডাকি বেড়ে গেছে৷”
নঈম নিজাম বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাংবাদিকদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই৷ আমাদের সম্মিলিতভাবে এগুলো মেকাবেলা করতে হবে৷”
তাঁকে হুমকি এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তক নিয়ে আমার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় ওলামা লীগ প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে প্রকাশ্যেই আমার ফাঁসি দাবি করেছে৷ এরপর বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে উকিল নোটিশ পাঠায় তারা৷ রাজশাহীর যে মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন, সেই মামলা দায়ের করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির দুই নেতা৷ এগুলো আমরা আইনগভাবেই মোকাবেলা করব৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, তারা এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই সাংবাদিকতা করি৷ কিন্তু এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন আরো অনেক সম্পাদক এবং সাংবাদিক৷ বাংলাদেশে সাংবাদিকতাসহ মত প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচেছ৷ ঝুঁকি আগের চেয়ে বাড়ছে৷” সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ