বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: জি বাংলা, জি টিভি, জি সিনেমাসহ ভারতীয় জি নেটওয়ার্কের সব চ্যানেলের সমপ্রচার বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে। গতকাল থেকে এসব চ্যানেল দেখতে পারছেন না দর্শক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ। ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়েও বিষয়টির সত্যতা মিলেছে।
বিভিন্ন ক্যাবল অপারেটর প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চ্যানেলগুলো বন্ধ করতে কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। যদিও ক্যাবল অপারেটর প্রতিষ্ঠান জাদু ডিজিটালের কাস্টমার সার্ভিস কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বাংলাদেশে চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত সোমবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দুই পরিবেশক সংস্থা ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেড এবং জাদু ভিশন লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার পরই জাদু ভিশন জি নেটওয়ার্কের সব চ্যানেলের সমপ্রচার বন্ধ করে দেয়।
যদিও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চ্যানেলগুলো বন্ধ করতে বলা হয়নি। ক্যাবল অপারেটরদের কাছে এসব চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন সমপ্রচার হচ্ছে কিনা তা জানাতে বলা হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি আগামী সাত দিনের মধ্যে ক্যাবল অপারেটরদের জানাতে বলা হয়। এর আগেও একই বিষয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের তিনটি চিঠি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। তবে সর্বশেষ চিঠিতে কারণ দর্শানোর পর জি সিরিজের চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
এদিকে হঠাৎ করে জনপ্রিয় এই ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকজুড়েও গতকাল ব্যাপক আলোচিত ছিলো বিষয়টি। অনেকেই সিদ্ধান্তটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলেছেন, বিদেশী চ্যানেল অনর্থক বন্ধ করে দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, এটা কেন হলো জানি না। তবে বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন বিদেশী কোনো চ্যানেলে প্রচার হবে না এমনটা সিদ্ধান্ত ছিলো। আর সেটা বন্ধ আছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। কিন্তু হঠাৎ করে জি নেটওয়ার্ক এর চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলো। এ ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ের কেউও যোগাযোগ করেনি আমাদের সঙ্গে।
টেলিভিশন মালিকদের এসোসিয়েশন, স্থানীয় ক্যাবল মালিক ও তথ্য মন্ত্রনালয়ের মধ্যে মিটিং হয়েছে শুনেছি। আর তার পরই বন্ধ হয়েছে জি-বাংলা ও অন্য চ্যানেলগুলো। তিনি বলেন, আমাদের কেউ ডাকেনি। এখন দেশীয় বিজ্ঞাপন বিদেশী চ্যানেলে যাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও কেন এই চ্যানেলগুলো বন্ধ হলো জানি না। আর চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকদের ফোনের যন্ত্রনায় টেকা যাচ্ছে না। তারা বলছে, বিদেশী চ্যানেল না থাকলে মাসে টাকা দিয়ে লাভ কি! আরো নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এমনিতেই মাসের ২ তারিখ আজ। এখন যে বিল চাইতে যাবো গ্রাহকদের কাছে সেই সাহসই পাচ্ছি না। তাহলে আমি কর্মচারীদের বেতন দিব কিভাবে, বিদ্যুৎ বিল দিব কিভাবে? এরপর স্টার, সনি, বিবিসিসহ যা আছে বিদেশী চ্যানেল সবই বন্ধ হবে সামনে। আপনারা কি কোনো উদ্যোগ নেবেন এ বিষয়ে? তিনি বলেন, আমরা কি করতে পারি। সরকার যা ভালো মনে করবে তাইতো করবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
আমরা হয়তো বুধবার সবাই মিলে বসে দেখবো কি করা যায়। প্রসঙ্গত, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনও চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এদিকে জি-বাংলা, জি-বাংলা সিনেমা, জি-সিনেমা ও জি-টিভিসহ এই নেটওয়ার্কের সব চ্যানেল বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বন্ধ করার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, আইন প্রয়োগ করেছে। গতকাল সচিবালয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।
ভারতের জি-নেটওয়ার্কের চ্যানেল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমত সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। সরকার প্রচলিত আইন প্রয়োগ করেছে। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি কোনো চ্যানেলে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায় না।
শুধু দেশীয় বিজ্ঞাপন নয় কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যায় না। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের আইন। ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর উপধারা-১৯ এ সেবাপ্রদানকারী কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেসব অনুষ্ঠান সমপ্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারার ১৩ উপধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, একই ধরনের আইন ভারতে আছে, যুক্তরাজ্যে আছে, কন্টিনেন্টাল ইউরোপে আছে, অন্য দেশে আছে। সেসব দেশে এই আইন মানা হয়। বাংলাদেশে এই আইনটি মানা হচ্ছিল না। আইনটি প্রয়োগ করা হয়নি। এটি না করার কারণে যেটি হয়েছে- বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো যে বিজ্ঞাপন পেত সেই বিজ্ঞাপনের বড় একটা অংশ চলে গেছে ভারতে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটা পরিসংখ্যান দেই, ইউনিলিভার বাংলাদেশে আজ থেকে ৫ বছর আগে প্রতিমাসে বিজ্ঞাপন খাতে ১৫ কোটি টাকা খরচ করতো।
যেটি ৫ বছর পর ২০ কোটি হওয়ার কথা ছিল, সেটি না হয়ে বরং কমে ৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বাকি বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছে যেটি আইন বহির্ভূত। আমি শুধু একটা কোম্পানির উদাহরণ দিলাম। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারব না, এ রকম আরও অনেকগুলো কোম্পানির বিজ্ঞাপন অন্য দেশে চলে গেছে। ১লা এপ্রিল আমরা যখন দেখতে পেলাম ডাউনলিংক করে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় তখন আমরা নোটিশ দিয়েছি পরিবেশক সংস্থাকে। আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি। তিনি বলেন, এখন যেটি তারা করতে পারে তাহলো তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোর কাছে ক্লিন ফিড চাইতে পারে। অথবা তারা এখানে যন্ত্র স্থাপন করে ক্লিন করে এখানে চ্যানেল প্রদর্শন করতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার কোনো চ্যানেল ডাউনলিংক করে না, যারা করে তারাই বলতে পারবে- এটা কেন বন্ধ হয়েছে। আমরা নোটিশ দিয়েছি যাতে বিজ্ঞাপন ছাড়া দেখানো হয়, বিজ্ঞাপনসহ দেখানো হচ্ছে এটা আইনের লঙ্ঘন। হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা নোটিশ দিয়ে সাতদিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলেছি। ১ এপ্রিল নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে জবাব দিক, এরপর জবাব অনুযায়ী ব্যবস্থা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস