বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে একের পর এক খুনের পর দায় স্বীকার করছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস এবং আনসার আল ইসলাম নামে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস।
২০১৫ সালে ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর প্রথম আইএস দায়িত্ব স্বীকার করে। একই বছর লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার পর আল কায়েদার প্রথম দায়িত্ব নেয়।
হিসেব করে দেখা যায় গত এক বছরে অন্তত ৬টি হত্যাকাণ্ডে আলকায়েদা এবং ১৩টিতে আইএস দায় নিয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আইএস এবং আল কায়েদার কোনো অস্তিত্ব এদেশে নেই।জেএমবি কোনো ঘটনা ঘটালে আইএস দাবি করছে আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কোনো হত্যা করলে আল কায়েদা দায় স্বীকার করছে।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমরা প্রায় দেড়শ জন গ্রেপ্তার করেছি এর মধ্যে ৪৯ জনের মতো অভিযুক্ত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ইন্টারভিউ করে, তদন্ত করে, তাদের ডকুমেন্ট এবং অন্যান্য এভিডেন্স পর্যালোচনা করে ফরেনসিক করে কিছু করেই কিন্তু আমরা এ ধরনের কোনো লিংক পাই নাই।”
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্বের প্রশ্নে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারলে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন- “এখন এখানে যদি বলা হয় যে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে! আমি বলবো যে না। কিন্তু প্রয়াস আছে। আল-কায়েদা? ইয়েস, তাদের একটা সমর্থক কিছু গোষ্ঠী এখানে আছে”।
প্রতিটি হামলার পর মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নিজস্ব ওয়েব সাইটে দায় স্বীকার করতে দেখা যায়। বাংলাদেশে এসব হামলা এবং জঙ্গী তৎপরতা যারা পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের কাছেও এসব দাবির ভিত্তি স্পষ্ট নয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আব্দুর রব খানের মতে দাবি যেই করুক বিষয়টি আশঙ্কার কারণ হত্যাকাণ্ড বাড়ছে।
“তারা কোঅর্ডিনেটেড ওয়েতে কাজ করতেছে এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নাই। এটাকে এখন জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যে কেউ বলতে পারে যে এটা আমাদের ক্লেইম।
এই যে দাবিগুলো আমার কাছে মনে হয় অর্থহীনভাবে করতেছে। দেখা যাচ্ছে তাদের হত্যার ধরন এবং টার্গেট মোটামুটি সিমিলার”।
বাংলাদেশে গত এক মাসে বেশকয়েকটি খুনের ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে।
এসব হামলা থামানো যাচ্ছে না কেন এ প্রশ্নে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, “নতুন নতুন অ্যাপস দিয়ে কে কাকে কোন মেসেজটা দেয়, কিভাবে কী করে সেটাকি কন্ট্রোল করা সম্ভব নাকি?
কয়দিন আগে এফবিআইয়ের সঙ্গে বসছিলাম আমরা আমেরিকা থেকে এক্সপার্ট আসছিলো তাদেরকে আমি বলছি তারাও অপারগ। তারা বলে যে এগুলো কন্ট্রোল করা আমাদের দ্বারা সম্ভব না। কেউ পারে না”।
বাংলাদেশে আল কায়েদা বা আইএস আছে কি নেই এ বিতর্কের মাঝেই এ অঞ্চলে ঘাঁটি গড়ে তোলার ঘোষণা পাওয়া যাচ্ছে। আইএস এর মুখপত্র দাবিক ম্যাগাজিন বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে।
যেখানে আইএস আমীর নিয়োগ করে বাংলাদেশে তৎপরতার সুষ্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে আটক বাংলাদেশিদের তথ্যেও আইএসে যোগ দেয়া এবং বাংলাদেশে হামলার পরিকল্পনার কথা জানা যাচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন এদেশে সবকিছু নিয়ে রাজনীতি হয়।
“যেভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাদেরকে ধরছে লোকে বিশ্বাস করছে না। আইএস একটা পতাকা ওড়াবে না আল-কায়েদা একটা পতাকা ওড়াচ্ছেনা সঠিক।
কিন্তু তাদেরকে ফলো করার মতো অর্গানাইজেশন আছে সেগুলো মোটামুটি ধরা ছোয়ার বাইরে থাকছে যেহেতু এই দেশে রাজনৈতিক বিশাল সংঘাতের ক্ষেত্র আছে বাদানুবাদের জায়গা আছে”।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর ভিকটিমকে ইসলামের দৃষ্টিতে দোষী বানানোর চেষ্টা হয়।
ফেইসবুক টুইটারে খুনের সমর্থনের ব্যাপক প্রকাশ দেখা যায়।
ঢাকার বাইরে একটি গ্রামের বাজারে চায়ের দোকানে বসে সাদ্দাম বলেন “আমি মুসলমান আমার সামনে কেউ যদি ইসলামের খারাপ কিছু বলে আমার ভাল লাগবে না। তবে মারাডা ঠিক হয়নি”। বাজারে ক্যারম খেলছিলেন আরিফ তিনি বলেন, “বলতেছে যে ধর্ম নিয়ে খুন কিন্তু এগুলো কিছুই না সব রাজনীতি”।
বাংলা৭১নিউজ/বিবিসি