প্রায় এক যুগ আগে বরিশালে মুলাদী উপজেলার সাংবাদিক মনির হোসেন রাঢ়ী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত রাসেল রাঢ়ীর সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও দণ্ডিতের আপিলগ্রহণ করে আজ রবিবার এ রায় দিয়েছেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
লিগ্যাল এইডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রিমি নাহরীন।
আদালত রায়ে বলেছেন, ঝগড়া-বিবাদের মধ্যে হঠাৎ হত্যাকাণ্ডটি ঘটলেও এ হত্যাকাণ্ডটিকে উদ্দেশ্যহীন বলা যাবে না। অবশ্যই এ হত্যাকাণ্ডটি ‘শাস্তিযোগ্য নরহত্যা’। তবে হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। যে কারণে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরিবর্তে আাসমিকে যাবজ্জীবন দেওয়া হলো।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, “হাইকোর্ট রায়ে রাসেল রাঢ়ীকে মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন। তবে রাসেলের বাবা আলাউদ্দিন রাঢ়ীর কারাগারে মৃত্যু হওয়ায় তার নাম আপিল শুনানি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ”
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে ইতোমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে নোট দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আইন কর্মকর্তা অমিত দাশ গুপ্ত।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মুলাদী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দলিলউদ্দিন মাস্টার ও আনোয়ার হোসেনের বাড়ির চলাচলের পথ বন্ধ করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন আলাউদ্দিন রাঢ়ী ও তার ছেলেরা। দলিলউদ্দিন বিষয়টি তার প্রতিবেশী মুলাদী প্রেস ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ীকে জানালে মনির ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের কথা বলেন।
এ সময় আসামিদের সঙ্গে মনিরের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আসামিরা মনিরের ওপর হামলা করলে তিনি আহত হন। রাসেল মনিরের মাথায় কোদাল দিয়ে কোপ দিয়েছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মনিরের ভাই জসিম উদ্দিন মুলাদী থানায় মামলা করেন।
২০১১ সালের ১৭ মার্চ পুলিশ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরমধ্যে ২০১৪ সালের ২ জুলাই আসামি মোতালেব রাঢ়ী মারা যান। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মারা যান মামলার আরেক আসামি আলেয়া বেগম। তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালত আলাউদ্দিন এবং তার দুই ছেলে সোহাগ ও রাসেল রাঢ়ীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করেন।
বিচার শেষে এ মামলায় ২০১৬ সালে বরিশালের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সুদীপ্ত দাস আসামি আলাউদ্দিন ও রাসেলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর সোহাগ রাঢ়ীকে খালাস দেন। পরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন আসামিরা। এ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে কারাগারে মারা যান আলাউদ্দিন রাঢ়ী।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ