নোয়াখালীতে বন্যার পানি নামছে ধীরগতিতে। ফলে নোয়াখালীর বন্যা রূপ নিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। জেলায় এখনও প্রায় ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০ হাজার মানুষ অবস্থান করছেন। জলাবদ্ধতার কারণে নিম্নাঞ্চল ও শহরতলীর মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানি অনেকটাই স্থির হয়ে আছে। খালের পানিতে কোনো প্রবাহ নেই। বন্যার পানি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে আশপাশের বাসাবাড়ির আঙিনায়। মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলাচল করছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে জনসাধারণ বলছে, তাদের দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনও তারা দেখছেন না।
তোফায়েল আহমেদ নামের এওজবালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বলেন, প্রধান সড়কে পানি নেই বলে বন্যা শেষ তা বলা ঠিক না। আমার বাড়িতে এখনো হাঁটুর ওপরে বন্যার পানি। বসতঘরের ভেতরও হাঁটুর কাছাকাছি পানি। গত দুই দিনে একটুও পানি কমেনি। আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই।
মোহাম্মদ শহীদ নামের বেগমগঞ্জ উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন, বাড়ির আঙিনায় এখনো বন্যার পানি। গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রথম দিকে পানি কমার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু গত দুই দিন পানি একটুও কমেনি। এ পরিস্থিতিতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছি।
নোয়াখালী জেলা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সদস্য সচিব জামাল হোসেন বলেন, জেলা শহরে বুক চিরে বয়ে যাওয়া নোয়াখালী খালসহ বিভিন্ন খাল যথাযথ সংস্কার না হওয়া, খালের ওপর কিংবা খালের পাশ ঘেঁষে নির্মিত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনার ফলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা।
নোয়াখালী পৌর শহরে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো নির্মিত হলেও পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। উপরন্তু সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও পৌরসভার মধ্যে জলবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মঞ্জু বলেন, আমাদের নোয়াখালী ভৌগলিকভাবে নিচু। প্রতি বছর বর্ষায় জেলাতে এমনিতেই জলাবদ্ধতা হয়। এবছর নোয়াখালীর ইতিহাসের স্মরণকালের বন্যা হয়। ফলে এখন অনেকটা স্থায়ী জলাবদ্ধতার রূপ ধারণ করেছে।
কারণ হচ্ছে ধারাবাহিক দখল ও বহুতল ভবন নির্মাণ করে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করা। এখন সময় এসেছে এসব দখলদারিত্বের অবসান করতে হবে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে দখল মুক্ত করে পানি নিষ্কাশনের পথ প্রসারিত করবে, এমটাই প্রত্যাশা জেলাবাসীর। দখলের যে সংস্কৃতি রয়েছে তার অবসান করতে হবে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, খালগুলো দিয়ে পানি না নামার কারণে বর্তমানে বন্যার পানি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোও বাড়ি ফিরতে পারছে না।
আবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই সঙ্গে বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উত্তরণে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস