বাংলা৭১নিউজ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ভারি বর্ষণে পানি বেড়ে হাকালুকি হাওরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এতে মৌলভীবাজারের ৩ উপজেলায় হাওর পাড়ের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন দূর্গতরা।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। এর ফলে গবাদি পশুরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে চরম আকারে। অব্যাহতভাবে পানি বাড়ায় দূর্গতরা রয়েছেন চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায়। এদিকে, মৌলভীবাজার-কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে জেলা সদর ও রাজধানীর সাথে সড়ক যোগাযোগ।
স্থানীয়রা জানান, এবার বন্যা শুরু হয়েছে চৈত্র মাসের শুরু থেকে। জৈষ্ঠ্য মাসে এর তীব্রতা এতই বেশি যে, বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়েছে সবাইকে। এখনও আষাঢ়, শ্রাবণ দুই মাস বাকি। এর ফলে হাওর পাড়ের মানুষ এবার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করছেন।
জলাবদ্ধতা ও বন্যাকবলিত এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও লোকজন জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি ভেঙ্গে নৌকা দিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়রা খাদ্যাভাবে লোকজন কম দামে গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছে। এবছর অকাল বন্যায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় কিভাবে সারাবছর পার করবেন তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন দূর্গতরা।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া উপজেলা ভুকশিমইল ইউনিয়ন, জয়চন্ডী, কাদিপুর, কুলাউড়া সদর, ব্রাহ্মণবাজার, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এই ৭ ইউনিয়নের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জুড়ী উপজেলার ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ টি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার ১৪ থেকে ১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও, সোনাপুর, শাহাপুর, রাজাপুর, নিশ্চিন্তপুর, গোবিন্দপুর, জাঙ্গিরাই, নয়াগ্রাম, শিমূলতলা, ইউসুফনগর, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর, খাগটেকা, তালতলা, কালনিগড়, হরিরামপুর, কৃষ্ণনগর, ভবানীপুরসহ ৩০ টি গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা ও বাড়ীঘর, ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
বড়লেখা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম জানান, বড়লেখার ৩ ইউনিয়নের ৬০-৭০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এখনও কোন ত্রান আসেনি। আসলে তা বন্টন করা হবে।
বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি বলেন, ‘আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে সরেজমিন কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ও কাদিপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখেছি। হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে রাস্তাঘাটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বস্তায় বালু ভর্তি করে আপাতত ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য বলেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য আপাতত কোন বরাদ্দ নেই। তবে ঈদের জন্য ১০৬ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ পেয়েছি। সেগুলো দ্রুত বন্টন করার ব্যবস্থা করছি।’
বাংলা৭১নিউজ/জেএস