বাংলা৭১নিউজ,(যশোর)প্রতিনিধি: যশোরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত সন্ত্রাসী জুয়েলের বিরুদ্ধে আনসার সদস্য হোসেন আলী হত্যা মামলাসহ ৬টি হত্যা মামলা রয়েছে। অন্তত ১৬টি মামলার আসামি এ জুয়েলের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক, সড়ক ডাকাতি, সোনার দোকানে লুটসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে যশোরাঞ্চলে সাপ্লাইয়ের নেটওয়ার্কও ছিল তার।
বৃহস্পতিবার ভোরে যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুরের মধ্যপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জুয়েল নিহত হন। জুয়েল (২৯) সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের আমজাদ মোল্লার ছেলে।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আনসার সদস্য হোসেন আলী হত্যা মামলার প্রধান আসামি জুয়েলের বিরুদ্ধে এলাকায় হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ও চুরি, দখল লুটপাটের অভিযোগ আছে। যশোর-মাগুরা মহাসড়কে জুয়েলের নেতৃত্বে ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। এর আগে জুয়েলের ছোট ভাই বাবলা ও খালু বুলি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
জুয়েলের পরিবার পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আর্দশে বিশ্বাসী। তিনি নিজেও চরমপন্থী দলের তরুণ নেতা। যশোরের হাশিমপুর ইউনিয়নটি চরমপন্থীদের মূল ঘাটি ছিল। ওই এলাকা থেকে ১৯৯৭ সালে কিছু লোক আত্মসমর্পণ করলেও জুয়েলের বাবা জমসেদ ও খালু বুলিসহ অধিকাংশ লোক অস্ত্র জমা না দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
চরমপন্থীদের ব্যবহৃত জমা না দেয়া অস্ত্র ১৯৯৭ সাল থেকে হাশিমপুর এলাকার সন্ত্রাসীরা ব্যবহৃত করতে থাকে। ডাকাতিসহ ভাড়াটে খুনের কাজে ওই অস্ত্র ব্যবহৃত হতো। জুয়েলের বাবাসহ কয়েকজন বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়।
সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করা আসামি চৌগাছার শামীম কবীরের সঙ্গে অস্ত্র ও মাদক লেনদেন ছিল জুয়েলের। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সন্ত্রাসী বুলি নিহত হয়।
পরবর্তীতে সন্ত্রাসী বুলির ছেলে মুন্না ও বুলির ভায়রাভাইয়ের ছেলে জুয়েল ২০ থেকে ২৫ জনের ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে। জুয়েলের নেতৃত্বে এলাকায় এ বাহিনী ছিল ত্রাস। পূর্ব বিরোধের জের ধরে হাশিমপুর বাজারের আনসার সদস্য হোসেন আলীর বুকে ওয়ান শুটারগান ঠেকিয়ে গুলি করে ক্যাডার বাহিনীর প্রধান জুয়েল।
সন্ত্রাসী জুয়েল কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে যশোরাঞ্চলে সরবরাহ করতো। এজন্য এ অঞ্চলে তার নেটওয়ার্কও ছিল। ইয়াবা পাচারের নেটওয়ার্ক থাকায় সর্বশেষ সে কক্সবাজারে আত্মগোপনে ছিল। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে আটক করে।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম জানান, আনসার সদস্য হোসেন আলী হত্যা মামলার প্রধান আসামি জুয়েলকে মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়ে হোসেন আলী হত্যা মামলার অপর আসামি মুন্নাকে আটকের জন্য বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে অভিযানে বের হয় ডিবি পুলিশ।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে হাশিমপুর মধ্যপাড়ায় পৌঁছালে মুন্না ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এসময় গুলিবিদ্ধ হন জুয়েল। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়।
জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে হাশিমপুর বাজারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আনসার সদস্য হোসেন আলী। তিনি ঢাকার রূপপুরে কর্মরত ছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এসে তিনি খুন হন। সাবেক চরমপন্থি সদস্য হোসেন আলী ১৯৯৭ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে আত্মসমর্পণ করে আনসারের বিশেষ সদস্য হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হোসেন আলীর ছেলে হুমায়ুন কবীর (২৭) কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেআই