শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন সিলেটে বন্যা, এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সংশয় কাটছে না! পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে : প্রধানমন্ত্রী দাবার বোর্ডেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া আটলান্টিকে নৌকাডুবি, ৮৯ অভিবাসীর মৃত্যু মার্টিনেজের নৈপুণ্যে ইকুয়েডরকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনা প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পদ্মা পাড়ে উৎসবের আমেজ সকালে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৫ ইরানে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জিতলেন টিউলিপ সিদ্দিক এসসিও-র শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী কেন গেলেন না? ব্রিটেনের নির্বাচন: লেবার পার্টির বিশাল জয়, সুনাকের পরাজয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উত্তীর্ণ হবে ৬ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ প্রার্থী শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮১তম সভা অনুষ্ঠিত রাজধানীতে ৯ কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধার কাস্টমস কমিশনার এনামুলের ৯ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ ফেনীতে বেড়িবাঁধের ১০ স্থানে ভাঙন, ৪৬ গ্রাম প্লাবিত জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বন্যামুক্ত ‘সোনার বাংলা’: পাউবো ডিজি

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৯
  • ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

বন্যা নিয়ন্ত্রনে উপকূলীয় বাঁধসমূহ পুনরাকৃতিকরণ করতে হবে

নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর মেগা ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে

বাংলা৭১নিউজ রিপোর্ট: দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রয়েছে এক গৌরবজ্জল ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই প্রতিষ্ঠাণটির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।নদী মাতৃক বাংলাদেশে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ, বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, বন্যার কবল থেকে মানুষকে রক্ষা, সেচের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনে সেচ প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কতটা গুরুত্বপূর্ন তা ভালভাবেই জানতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আর সে কারনেই পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু পানি সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এসব পদক্ষেপের অন্যতম হচ্ছে- ১৯৭২ সালে বোর্ড গঠন করা এবং দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থা , সেচ ব্যবস্থা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বঙ্গবন্ধুর এই যে নিবির সম্পর্ক, এটি পাউবো’র সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিই কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে বাংলা৭১নিউজএর পক্ষ থেকে আমরা পাউবো মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: মাহফুজুর রহমানের মুখোমুখি হয়েছি একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে। 

বাংলা৭১নিউজ: ১৫ আগষ্ট পাউবো কীভাবে পালন করছে?

মো: মাহফুজুর রহমান: দেখুন, ১৫ আগষ্ট একটি কলঙ্কিত দিন। জাতির জন্য এটি ছিল এক অভিশাপ। এদিন খুনিরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। এসব খুনিদের অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্যে দিয়ে জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছে। আমি শ্রদ্ধার সাথে ১৫ আগষ্টের সেইসব শহীদদের স্মরণ করছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। একইসাথে শ্রদ্ধা জানাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যার কারণে জাতি এই কলঙ্কের দায়ভার থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হতে পেরেছে।

এবার আসি পাউবো প্রসঙ্গে। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বন্যামুক্ত ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার। মূলত ১৯৫৯ সনে এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিওয়াপদা)। ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির আদেশ নং: ৫৯ মোতাবেক ইপিওয়াপদা থেকে আলাদাভাবে সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) গঠণ করেন।

একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের যে রোড ম্যাপ প্রনয়ণ করেছিলেন, সেখানে পাউবোকে অনেক গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্টের কালো রাতের সেই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মুখ থুবড়ে পড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে দেখা সোনার বাংলা গড়ে, তোলার রোডম্যাপ। এই কালো মেঘের অশুভ ছায়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপরও পড়েছিল।

এই ধকল কাটাতে নানামুখি সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাউবো আইন, ২০০০ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের আওতায় পানি সম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পানি পরিষদের মাধ্যমে বোর্ডের শীর্ষ নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কারণে পাউবো এখন গতিশীল একটি প্রতিষ্ঠাণে পরিণত হয়েছে। একটি কথা না বললেই নয়: আর তা হচ্ছে- দেশের নদ-নদী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শ:ই বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই দেশের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

দেশের নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে পাউবো। আর আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ড আজ এতটা সফলতার মুখ দেখতে পেরেছে। নদী নির্ভর মানুষ পাচ্ছেন এর সুফল।

তিনি বলেন, একথা বললাম এ কারণে যে- আওয়ামী লীগ সরকারই ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি এবং ২০০১ সালে জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও আওয়ামী সরকারই ঐতিহাসিক ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে ১৯৯৭ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে ন্যুনতম পানি প্রবাহ নিশ্চিত করেছে। হাওর এলাকায় ২ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০০ সালে বাংলাদেশ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে।

তিনি বলেন, উত্তরে বিস্তৃৃর্ণ হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা এ ৩টি নদী বাহিত পলল ভূমিতে গড়া আমাদের বাংলাদেশ। এখানে অসংখ্য নদ-নদী সমগ্র দেশে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে। নদ-নদী সমূহের মধ্যে বড় তিনটি আন্তর্জাতিক নদী ( পদ্মা, মেঘনা, যমুনা)-সহ মোট ৫৭ টি সীমান্তনদী এবং বাকী গুলি দেশের আভ্যন্তরীন অববাহিকা ভিত্তিক অথবা প্রধান নদীর শাখা বা উপশাখা হিসেবে বহমান। সাতান্নটি সীমান্ত নদীর মধ্যে চুয়ান্নটি বাংলাদেশ-ভারত এবং তিনটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার এর সীমানা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক তিনটি নদীর সম্মিলিত অববাহিকার মোট আয়তন ১৭.২০ বর্গ কিলোমিটার। যার মাত্র সাত শতাংশ বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত। এ বিরাট অববাহিকার বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর মাধ্যমে সাগরে মিশে যায়। পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনার মিলিত প্রবাহ কখনো কখনো বর্ষাকালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। এ প্রবাহ সমৃদ্ধ নদীমালা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি অনন্য রূপ দিয়েছে।

চলমান বন্যা

 বাংলা৭১নিউজ: এবারের চলমান বন্যাটা কোন দিক থেকে এসেছে এবং এর প্রভাব কী ছিল?

মো: মাহফুজুর রহমান: দেখুন, ২০১৯ সালের বন্যার শুরুটা জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী অববাহিকার বাংলাদেশ ও ভারতের উজানের বিস্তৃৃত অংশে টানা মৌসুমি বর্ষণের কারণে দেখা দেয়। বিশেষ করে অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এলাকা বন্যা কবলিত হয়। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যভাগ হতে বাংলাদেশ ও উজানের অংশে বৃষ্টিপাতের মাত্রা হ্রাস পেলে নদীসমূহের পানি সমতল কমতে থাকে। এতে করে ক্রমান্বয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এ বন্যার তীব্রতার মাত্রা স্থানবিশেষে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশী হওয়ায় কয়েকটি স্থানে ইতোপূর্বের পানি সমতল রেকর্ড অতিক্রম করে।

অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলের উজানে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় এলাকাগুলোতে অতি ভারি বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট ইত্যাদি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহের প্লাবনভূমি সহ নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়।এর প্রভাবে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নওগাঁ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ইত‌্যাদি জেলার প্লাবনভূমি সহ নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়।

আবার মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী অববাহিকার বাংলাদেশ ও ভারতে বৃষ্টি শুরু হয়। একারণে মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সংশ্লিষ্ট অববাহিকা সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ও বাঁধের বাইরে বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ইত‌্যাদি জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী অববাহিকার বাংলাদেশ ও ভারতের উজানের বিস্তৃৃত অংশে টানা মৌসুমি বর্ষণসহ অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, মুহুরি, তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবন এবং ফেনী ইত‌্যাদি জেলায় বন্যা দেখা দেয়।

বন্যা মোকাবেলায় পাউবোর গৃহিত আগাম প্রস্তুতি

 বাংলা৭১নিউজ: বন্যা মোকাবেলায় পাউবো কী ধরণের আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিল?

পাউবো মহাপরিচালক: বন্যা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বন্যা মৌসুমের পূর্বেই পাউবোকে সাথে নিয়ে বাঁধ ও নদীতীরে সম্ভাব্য ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ চিহ্নিত করেন এবং ভাঙ্গনরোধে আগাম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে বন্যা মোকাবেলায় পাউবোর ৯টি প্রশাসনিক জোনের প্রত্যেকটির জন্য ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বাঁধ ও নদী তীরের ৬৫.৮১৩ কিঃমিঃ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে। পানি সমতলে বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বেই বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে জরুরী ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ন এলাকাসমূহের মেরামত কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সারাদেশে আকষ্মিক বন্যা ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন ইত্যাদি মোকাবেলার জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে ৯টি জোনের কমপক্ষে ২৬টি বিভাগীয় দপ্তরকে আসন্ন বন্যা এবং নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে জিওটিউব, জিওব্যাগ, বালি, বস্তা সেলাই সরঞ্জাম সাইটে মজুদরেখে আসন্ন দুর্যোগ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করে। বন্যা এবংনদীভাঙ্গনে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সর্বমোট ২,৭৪,৫০০টি জিওব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রী মজুদ করা হয় যা বন‌‌্যাকালীন সময়ে ব্যবহৃত হয়।

দেশে বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে ১১ এপ্রিল,২০১৯ হতে বাপাউবো’র মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সকল প্রকার ছুটি স্থগিত করা হয়। পাউবো’র সদর দপ্তর ওয়াপদা ভবনে বন‌্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরন কেন্দ্র হতে সারাদেশে নদ-নদীর পানির লেভেল, বৃষ্টিপাতের তথ্য এবং বন্যা পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। অনুরূপভাবে সদর দপ্তরে নদীভাঙ্গন, নির্মিতবাঁধ, নদীতীর সংরক্ষণ কাজ ও অন্যান্য অবকাঠামো সমূহের ক্ষয়ক্ষতির তথ্যসংগ্রহ ও তথ্য প্রদানের লক্ষ্যে ২৯ এপ্রিল হতে “কেন্দ্রীয় বন্যা তথ্য কেন্দ্র্র” চালু করা হয়।

বন্যাকালীন সময়ে গৃহীত জরুরী ব‌্যবস্থা

 বাংলা৭১নিউজ: বন্যাকালীন সময়ে কী ধরণের জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন?

মো: মাহফুজুর রহমান: বন্যা মোকাবেলায় আমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিতে হয়। এই ধরুণ এবারের চলমান বন্যায় আমরা প্রাথমিকভাবে দেখলাম উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সারাদেশে ৯১টি স্থানে প্রায় ৫ কিঃ মিঃ বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং ৪৯৫টি স্থানে প্রায় ১৪১ কিঃ মিঃ বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া পানির তীব্র স্রোত, ঘূর্ণাবর্তের কারণে প্রায় ১৩ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাউবো ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো ও মানুষের জানমাল রক্ষার্থে আপদকালীন জরুরী কাজ শুরু করে। এসব জরুরী কাজের অধিকাংশ ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এরফলে চলতি বছর সমূহক্ষতি হতে মানুষের জানমাল রক্ষা করা বহুলাংশে সম্ভব হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও নূন্যতম রাখা সম্ভব হয়েছে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বন্যা চলাকালে বন্যা কবলিত ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সচিব এবং আমি (মহাপরিচালক) নিজে একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে দিকনির্দেশনা দিয়েছি। যার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বন্যাকালীন সময়ে সবকিছুই নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যার কারনে যেসব স্থানে বাঁধ ভেঙ্গেছে বর্তমানে সেসব ভাঙ্গন বন্ধ করার কার্যক্রম জোর গতিতে চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানের ভাঙ্গন বন্ধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট বাঁধের ভাঙ্গন চলতি আগষ্ট মাসে যে বন্যার আশংকা করা হচ্ছে সেই বন্যা আসার পূর্বেই বন্ধ করা হবে।

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা

 বাংলা৭১নিউজ: বন্যা থেকে পরিত্রাণের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন, বিগত বছরগুলোর মতোই পানি উন্নয়ন বোর্ড অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেটের আওতায় বাঁধ ও অন্যান্য পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এটি একটি অপ্রতুল ব্যবস্থা। এখানে অর্থের কারণে অনেক সময় কাজের গতি স্লথ হয়ে যায়।

বর্তমানে বন্যা জনিত ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনায় নিয়ে সম্পদের সমন্বিত টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে। একারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী বেসিন, তিস্তা নদী বেসিন, গঙ্গা-পদ্মা নদী বেসিন, আপার মেঘনা বেসিন (সুরমা-কুশিয়ারা নদী বেসিন সহ), লোয়ার মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলী নদী বেসিন (হালদা নদী বেসিন সহ), সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী বেসিনভিত্তিক সমীক্ষা চালানো হবে। এই সমীক্ষা রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় এনে এবং ২০০ বছরের রিটার্ন পিরিয়ড বিশ্লেষন করে প্রধান প্রধান নদ-নদীসমূহের দুই তীরকে স্থায়ীকরণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে আনা হবে। এছাড়াও বাঁধসমূহ প্রশস্থ ও উঁচু করা গেলে বন্যার ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় রাখা যাবে। উপকূলীয় বাঁধসমূহ পুনরাকৃতিকরণ ও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ওইসব এলাকার বন্যার প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। আর ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয়সমূহকে খননের মাধ্যমে পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।

একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের নদ-নদীগুলোকে মেগা ড্রেজিং এর মাধ্যমে এর নাব্যতা ধরে রাখার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যাতে করে বর্ষা মৌসুমের পানিকে ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে লাগানো সম্ভব হয়। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সহ সরকারের রূপকল্প-২০৪১ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।

বাংলা৭১নিউজ/সাখাওয়াত হোসেন বাদশা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com