বাংলা৭১নিউজ,(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নিউমার্কেট বুধবার দুপুরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বগুড়ার সবচেয়ে বড় এই বিপণি বিতানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরমধ্যে ৭ জনই ছিল একই পরিবারের। বাকি ৪ জন ছিলেন পুলিশ সদস্য।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বুধবার দুপুরে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আফজাল রাজনের নের্তৃত্বে একটি টিম দুপুরে নিউ মার্কেটে গিয়ে নির্দেশনা কার্যকর করেন।
এ দিকে জেলা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বগুড়ার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, মার্কেট খোলার প্রথম দিন থেকে সেখানকার দোকানগুলোতে যেভাবে মানুষের ভিড় বাড়ছিল তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল। এতে শহরবাসীর মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশের মতো বগুড়ার নিউ মার্কেটসহ সকল বিপণি বিতান গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল। কয়েক দফায় বাড়িয়ে তা ১৬ মে পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন গত ২১ এপ্রিল পুরো জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ১২ মে পর্যন্ত এ জেলায় মোট ৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার জেলায় সর্বোচ্চ ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
রমজান ও ঈদে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ মে থেকে সারাদেশে বেশ কয়েকটি শর্তে সীমিত পরিসরে দোকান-পাট ও মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়। এসব শর্তের অন্যতম ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। তবে খোলার প্রথমদিনই বগুড়া নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
সেখানে বেচা-কেনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কাউকেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতেও দেখা যায়নি। বরং পছন্দের পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিক্সসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদেরকে একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি এমনকি ঠেলাঠেলিও করতে দেখা গেছে। অনেকে তাদের শিশু সন্তানদের নিয়েও কেনাকাটা করতে আসেন।
হাতে গোণা কয়েকটি বড় দোকানে বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে দেখা গেলেও অধিকাংশ দোকানিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় ন্যুনতম কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এসব কারণে সাধারণ মানুষ রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এদিকে বগুড়ায় নতুন করে চার পুলিশ সদস্য এবং শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার এক ব্যবসায়ী পরিবারের সাত সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ মে) রাতে বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে জেলার ১৭৬টিসহ মোট ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে বগুড়ার ১১ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বাকি ১২টি সিরাজগঞ্জের নমুনা ছিল।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, পুলিশ লাইন্সে ইতোপূর্বে করোনায় আক্রান্ত এক কনস্টেবলের সঙ্গে একই রুমে থাকার কারণে নতুন করে চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরকে পুলিশ লাইন্সে কোয়ারেন্টাইনে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এফএস