হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার অভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়ার অভিযোগ সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছি গ্রামের লিলি তালুকদারের স্বজনেরও। ছেলে এনামুল হক অভিযোগ করেন, তাঁর মায়ের অক্সিজেন লেভেল ৬৮ তে নেমে এসেছিল। তাঁকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাসপাতালজুড়ে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করতে পারেননি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা বিশেষায়িত এই হাসপাতালে বেশির ভাগ করোনা রোগীই শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন। কয়েকজন স্বজন জানান, তাঁদের রোগীর উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দরকার। অথচ রোগীকে রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের ‘ইয়ালো ওয়ার্ডে’ সকালে তিনজন রোগীকে বারান্দায় রেখে চিকিৎসা চলছিল। গাবতলী উপজেলার চক সেকেন্দার গ্রামের বাসিন্দা ও শিশু একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আজিজুল হক (৬৪) শ্বাসকষ্টে অবিরাম ছটফট করছিলেন। তাঁকে বারান্দায় রেখে সিলিন্ডারের অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
ছেলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, শ্বাসকষ্ট বেশি হলে রাত ১২টায় তাঁর বাবাকে ভর্তি করেছেন। তবে সকাল ৯টা পর্যন্ত ওয়ার্ডে বিছানা পাননি, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হলেও সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। গেল ২৭ জুন শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০০ তে উন্নীত করা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৩০ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ছিল ২০০ জন। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার সকালে হাসপাতাল প্রশাসন আরও ২৫ শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরও সকাল সাড়ে নয়টায় ‘ইয়ালো ওয়ার্ডে’র বারান্দায় শ্বাসকষ্টে ছটফট করা তিনজন রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এখানে মাত্র দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা চালু আছে। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়া আরও দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা মিললেও এখনো তা চালু করতে না পারায় বাক্সবন্দী হয়ে রয়েছে।
স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন এবং পরে আরও ২ জন রোগী মারা গেছেন। তবে কেউ হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা–সংকটে মারা গেছেন এমনটা এখনো দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা জানাননি। অভিযোগ কেউ করতেই পারেন। তবে এই মুহূর্তে একসঙ্গে দুজনের বেশি রোগীকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলায় অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা এখানে নেই।
এ টি এম নুরুজ্জামান আরও বলেন, এখন ভরসা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা। তবে অক্সিজেন–সংকট রয়েছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার লিটার অক্সিজেন লাগছে। সাত দিনে সরবরাহ মিলছে মাত্র ৮ হাজার লিটার। রোগীর সংখ্যা অনুপাতে অক্সিজেনের বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার।
দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা বাক্সবন্দী থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজ উদ্যোগে টেকনিশিয়ান ডেকে এটি চালু করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে চালু করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও ন্যূনতম ২৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা চেয়ে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সাড়া মেলেনি।
এদিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১০০টি শয্যা রয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে ১২টি। শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মারা যাওয়া ৬ রোগী হলেন বগুড়ার শেরপুরের জাহাঙ্গীর হোসেন (৪২), নিলুফা বেগম (৫), জয়পুরহাটের প্রফেসরপাড়ার আবু হায়াত (৬০), কালাই উপজেলার মোলামগাড়ির মুক্তি বেগম (৩২), জয়পুরহাট শহরের তাজুর মোড়ের আফিয়া বেগম (৬০) ও ফজল (৫৮)।
বাংলা৭১নিউজ/আরকে