এদিকে, আজ শুক্রবার হাসপাতালের আশেপাশে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিল নাজমুল। সে মেয়েটির আরো ক্ষতি করতে পারে আশঙ্কায় এই প্রতিনিধি পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। নাজমুল আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কড়িয়া গ্রামের বাদাম ও ঝালমুড়ি বিক্রেতা কাসেমের ছেলে।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা আইয়ুব হোসেন পেশায় পোশাকশিল্পকর্মী। ধরঞ্জি ইউনিয়নের তাজপুর গ্রাম থাকেন তিনি। জানান, দুই বছর থেকে আমার মেয়েকে মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে বখাটে নাজমুল প্রতিনিয়ত উত্যক্ত করতো। মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিত, বিয়ে করার জন্য প্রকাশ্যেই বলত। বখাটের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে মেয়েটি এক পর্যায়ে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ পেয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনিছুর রহমান দুইবার বিচার বসালে বখাটে নাজমুল আর উত্যক্ত করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তার মেয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা শুরু করলে আবারও বখাটে নাজমুল তাকে উত্যক্ত শুরু।
ছাত্রীর বাবা আইয়ুব হোসেন আরো জানান, গত সোমবার বখাটে নাজমুল বাবার মুঠোফোনে কল দিয়ে বলে তিন দিনের মধ্যে বাড়িতে এসে আপনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা না করলে আপনার মেয়ের ক্ষতি করবো। ছাত্রীর বাবা-মা দুজনেই ঢাকায় পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তারা বাড়িতে ছিলেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তার মেয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হন। আশপাশে আগে থেকেই লুকিয়ে ছিল নাজমুল। মেয়েটি বের হতেই নাজমুল ছাত্রীকে পিছন দিক থেকে মুখ চেপে ধরে বাম গালে প্রচণ্ড জোরে কামড়ে দেয়। এতে মেয়েটির গাল বেয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এ সময় তার চিৎকারে দাদা জায়বর হোসেন বের হয়ে এলে বখাটে নাজমুল প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। ওই রাতেই জখম নিয়ে পাঁচবিবি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় মেয়েটিকে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটি জানান, আমি লেখাপড়া করতে চাই। আপনারা ওই বখাটের উপযুক্ত বিচার করেন। বাবা আইয়ুব হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাতেই খবর পেয়ে আমি ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসি। ছুটি না পাওয়ায় মেয়ের মাকে নিয়ে আসতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমার দুইটা মেয়ে গার্মেন্টে কাজ করে। নিজেররা কষ্ট করে মেয়েদের পড়ালেখা করাই। এভাবে অত্যাচার করলে মেয়েদের আমি কীভাবে পড়ালেখা করাবো? আমি বখাটে নাজমুলের কঠিন বিচার চাই। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনিছুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, এই প্রতিনিধি কৌশলে নাজমুলের বক্তব্য নেয়। সে মেয়েটিকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে। নিজেকে জয়পুরহাট সরকারী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র বলে দাবি করে নাজমুল জানায়, মেয়েটির সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে মাদ্রাসায় বিচার কেন হয়েছিল- এই প্রশ্ন করলে বখাটে নাজমুল কোনো জবাব দিতে পারেনি।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলার রহমান জানান, আটক বখাটে নাজমুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন নির্যাতিতের বাবা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসকে বি