বাংলা৭১নিউজ,মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুরের ডাসার থানা এলাকায় দুই কিশোরীকে একটি নির্জন ফ্ল্যাটে দুদিন আটকে রেখে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের একজন কর্মকর্তা দুই কিশোরীর পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে তাঁরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বুধবার স্কুলে যাওয়ার পর দুই কিশোরী (একজনের বয়স ১৩, অন্যজনের ১৪) নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পায়নি পরিবার। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়রা ডাসার থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব বোতলা গ্রামের একটি ভবন থেকে তাদের উদ্ধার করে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদার গতকাল শনিবার বলেন, ‘আমি উদ্যোগ নিয়ে গত শুক্রবার গভীর রাতে এ ঘটনায় মামলা করিয়েছি। চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনা সালিশযোগ্য কোনো ব্যাপার নয়। যদি কোনো পুলিশের এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ ও কিশোরীদের পরিবারের একাধিক সূত্র জানায়, গত বুধবার ওই দুই কিশোরীকে আটিপাড়া এলাকার শাকিব, নয়ন, আল-আমিন, হৃদয়সহ কয়েকজন একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। ফ্ল্যাটটি নয়নের চাচার। বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে। তখন ছেলেরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মেম্বার বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি টের পেয়ে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করি। এ সময় ওই ফ্ল্যাট থেকে সাত/আটজন পালিয়ে যায়। আমরা ধারণা করছি, সম্পর্কের সূত্র ধরেই হয়তো কিশোরীরা সেখানে গিয়েছিল। পরে হয়তো বখাটেরা ওই মেয়েদের ইজ্জত হরণ করছে।’
তবে এ ব্যাপারে জানার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা ফ্ল্যাটটিতে গেলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। তবে আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটটির মালিক মাহবুব সরদার। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর পরই তিনি আত্মগোপন করেছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।
এক কিশোরীর মা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, তাই আমাদের পক্ষে কেউ নেই। আমার মেয়ে ও আরেক মেয়ে বুধবার স্কুলে যায়। এর পরে আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শুনি, স্থানীয়রা আমার মেয়েসহ আরেক মেয়েকে এক ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেছে।’
‘এখানকার মাতুব্বররা সালিশ মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে আমাদের মামলা করতে দেয়নি। বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি দিয়েছে এবং মেয়েকে কয়েক দিন লুকিয়ে রাখতে বলেছে। তাই মেয়েকে ওর মামাবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি,’ অভিযোগ করেন ওই কিশোরীর মা।
আরেক কিশোরীর মা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আপনাদের কাছে কিছু বললে আমাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘দেলোয়ার দারোগা (এসআই) এবং বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিন মোল্লা বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার নাম করে তিন লাখ টাকা নিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এ কারণেই নাকি মামলা হয়নি।’
তবে ঘটনাটি সালিশে মীমাংসা করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন মতিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘মেয়েপক্ষের লোকজন বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে আমার কাছে এসেছিলেন। তবে আমি টাকাও নিইনি, মীমাংসাও করিনি।’
অন্যদিকে ডাসার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আপনারা তো নেগেটিভ কথাই ভালো শোনেন। শুনলে তো কিছু করার নাই। তবে আপনারা আরো তদন্ত করে দেখুন।’
বাংলা৭১নিউজ/এসকে