চারটি বিভাগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চালানো ড্রাইভ টেস্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার বিটিআরসি এ ড্রাইড টেস্টের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
এ ফলাফল অনুযায়ী, ফোরজি সেবার পাশাপাশি আউটডোর কভারেজেও সব অপারেটর নেতিবাচক অবস্থানে। এর বেঞ্চমার্ক সর্বনিম্ন ৮০ ডিবিএম নির্ধারিত থাকলেও কোনো অপারেটরই ৭০ ডিবিএম অর্জন করতে পারেনি।
বরিশালে কল সেট-আপ টাইমের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মান রক্ষায় সমর্থ নয় কোনো অপারেটর। ভয়েস কোয়ালিটি বা মেইন ওপিনিয়ন স্কোরের ক্ষেত্রে চার বিভাগেই নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে রবি। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের অবস্থা কাঙ্ক্ষিত মানের নিচে দুই বিভাগে। খুলনায় থ্রিজি ইন্টারনেটের ডাউনলোডের ক্ষেত্রে মান রক্ষা করতে পারছে না রবি। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের অবস্থা খারাপ চার বিভাগেই। কলড্রপের ক্ষেত্রে বেসরকারি অপারেটররা এ চার বিভাগে কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত মান রক্ষা করলেও টেলিটক তা পারছে না রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে। কল সেট-আপ সাকসেস রেটের ক্ষেত্রে বরিশালে সর্বনিম্ন মানের নিচে রয়েছে বাংলালিংক ও টেলিটক। তবে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেটের আপলোডের ক্ষেত্রে সব অপারেটরই সর্বনিম্ন মানের ওপরে রয়েছে।
জানা যায়, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান পরীক্ষায় বিটিআরসি ঢাকার পর রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল—এই চার বিভাগে বিভিন্ন স্থানে গত ৭ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করে। কিউওএস নীতিমালা অনুযায়ী অপারেটরগুলোর বিভিন্ন সেবার মান মূল্যায়ন করে র্যাংকিং করার কথা। র্যাংকিংয়ের জন্য এই ড্রাইভ টেস্ট অন্যতম। ঘোষিত মানদণ্ড অনুসারে সেবা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের বিরুদ্ধে বিটিআরসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় এ ড্রাইভ টেস্টের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে জানা যায়, রাজধানীতে ফোরজি গতিতে মানসম্মত সেবার বেঞ্চমার্কে নেই কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর। ফোরজির ডাউনলোডে গ্রামীণফোনের রয়েছে ৫ দশমিক ৪৪ এমবিপিএস, রবির ৫ দশমিক ৯১ এমবিপিএস এবং বাংলালিংকের ৫ দশমিক ১৮ এমবিপিএস। এ ড্রাইভ টেস্টে সরকারি অপারেটর টেলিটকের ফোরজি গতি যাচাই করা হয়নি। ওই প্রতিবেদন অনুসারে ঢাকায় কলড্রপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে অবস্থা গ্রামীণফোনের। কিউওএস নীতিমালা অনুসারে বেঞ্চমার্ক ২ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হলেও এ অপারেটরের কলড্রপের হার ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কল সেট-আপ টাইমের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক অবস্থানে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক। এ ক্ষেত্রে বেঞ্চমার্ক ৭ সেকেন্ড হলেও গ্রামীণফোনের ১০ দশমিক ৪ সেকেন্ড, বাংলালিংকের ৭ দশমিক ৬৯ সেকেন্ড এবং টেলিটকের ৭ দশমিক ১১ সেকেন্ড। আবার মেইন ওপিনিয়েন স্কোরের ক্ষেত্রে ঢাকায় নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে রবি। এ ক্ষেত্রে বেঞ্চমার্ক ৩ দশমিক ৫ হলেও রবির রয়েছে ৩ দশমিক ৪৭।
বিটিআরসি বলেছে, তারা মোবাইল সেবার মানের বিষয়ে প্রতিশ্রুত কার্যাবলি চালিয়ে যাচ্ছে। সেবার মানের বিষয়ে বিটিআরসির নির্দেশনা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের জরিমানা ও শাস্তির বিধান উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মোবাইল অপারেটরদের সেবার মানের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে কালের কণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে ভুক্তভোগীদের বরাতে বলা হয়েছিল, ফোরজির কাঙ্ক্ষিত গতি পাওয়া যাচ্ছে না। বড় শহরগুলোতেই এই দুরবস্থা। প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থা আরো শোচনীয়।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি টেলিকম রিপোর্টারদের সংগঠন ‘টিআরএনবি’-এর সঙ্গে এক আলোচনাসভায় বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেছিলেন, অপারেটরদের সেবার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মান বেঁধে দেবে কমিশন। তা পূরণ করতে না পারলে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, মোবাইল ফোন সেবা সম্পর্কে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট থেকে বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান ও তাদের গ্রাহক সন্তুষ্টি যাচাইয়ের জন্য প্রথমবারের মতো দেশের ১৫টি জেলায় জরিপ চালায়। জেলাগুলো ছিল হবিগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, বরিশাল, রংপুর, চাঁদপুর, ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা। কিন্তু সেই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
বিটিআরসি ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি সাময়িকভাবে মোবাইল সেবার বিভিন্ন মান নির্ধারণ করে দিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানেও কলড্রপ, দুর্বল নেটওয়ার্ক, গ্রাহকসেবার বেহাল দশার কথা বলা হয়। এ ছাড়া অপারেটরদের নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও সর্বজনীন কোনো মান রক্ষা হচ্ছে না বলে ওই নির্দেশনায় জানানো হয়।
মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শুধু বাংলালিংকফের বক্তব্য পাওয়া যায়। গত রাতে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস নির্ণয়ের মাত্রা চূড়ান্ত করার আগে অপারেটররা বিটিআরসিকে জানিয়েছিল যে ওয়্যারলেস সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কোনো প্রযুক্তির গতি সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। দেশে ফোর জির জন্য যে গতি নির্ধারণ করা হয়েছে তা স্পেকট্রামের মূল্য ও অপারেটরদের আয়ের সাপেক্ষে বাস্তবসম্মত নয়। এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই জরিপ করা স্থানগুলোতে অপারেটররা কিছু নির্ধারিত মাত্রা অর্জন করতে পারেনি।’
তাইমুর আরো বলেন, ‘সার্বিকভাবে এই সার্ভিসের মান শুধু মোবাইল অপারেটরদের ওপর নির্ভর করে না। এনটিটিএন, আইসিএক্স ও আইজিডাব্লিউর মতো অন্যান্য পক্ষের ওপরও সার্ভিসের মান নির্ভরশীল।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় আমাদের থ্রিজির গতি অন্যদের ফোরজির গতির চেয়ে বেশি। গত বছর সর্বোচ্চ স্পেকট্রাম কেনার ফলে আমাদের ডুয়াল ক্যারিয়ার থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক আরো শক্তিশালী হওয়ার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসক