বাংলা৭১নিউজ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি: অনেক অনুসন্ধানের পর বুধবার (১৫ অক্টোবর) র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন সাইবার অপরাধী মাহফুজুর রহমান নবিন (২৮)।
তাকে গ্রেফতারের পর একে একে উঠে এসেছে তার অপরাধের সব ভয়ংকর চিত্র।
আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার উদ্ভাবনী সব প্রতারণা কৌশল এবং ভয়ঙ্কর অপরাধ প্রবণতার কথা জেনে হতবাক হয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারাও।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী এবং গৃহিনী কারও ফেসবুক আইডি হ্যাক করার বাকি নেই তার।
অগণিত ফেসবুক আইডি হ্যাক করে তাদের ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অশ্লীল ছবি বা ভিডিও তৈরি করে পাঠিয়ে কারও কারও সংসারও ভেঙ্গেছেন।
এ অপরাধ করেই ক্ষান্ত হননি কখনও আবার র্যা ব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মানুষকে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়েছেন লাখো কোটি।
সাইবার অপরাধী মাহফুজুর রহমান নবিন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার তিতারকোণা মামদনগর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত ইজাজুর রহমান।
আটকের পর নবিনের বিরুদ্ধে র্যাব-৯ এর সিলেটের এসআই পঙ্কজ দাশ বাদি হয়ে সাইবার অপরাধের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নবিনকে বাহুবল থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সেই মামলায় নবিনের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অনেক অভিযোগ।
এ বিষয়ে র্যাব-৯ সিলেটের অপারেশন অফিসার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, আটক নবিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো হলো- অন্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বা আইডি ডিজেবল করে দেয়ার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত করা, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন, অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও বিদেশি সরকার প্রধান সম্পর্কে নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা মন্তব্য ছড়ানো, অশ্লীল ছবি ও ভিডিওতে বিভিন্ন জনের মাথা জুড়ে দিয়ে ছবি ও ভিডিও বানিয়ে সেটা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইল ও অনলাইনে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বহন, স্থানান্তর ও ছড়িয়ে দেয়া।
নবিনের বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে জানিয়ে (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, সাইবার অপরাধী নবিনের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। কয়েকমাসের নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টায় এ ধূর্ত অপরাধীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারী নারীদেরকে বেশি টার্গেট করে এই অপরাধী চক্র।
র্যাব সূত্র জানায়, ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর নবিন প্রথমে আইডির মালিককে মানসিক চাপ দেয়ার উদ্দেশ্যে আইডিতে থাকা একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টস বিভিন্ন জনকে পাঠিয়ে থাকেন। তারপর ধারাবাহিকভাবে হ্যাককৃত আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন, সম্ভাব্য সকল উপায়ে আইডির মালিকের সম্মান বিনষ্ট করা এবং সবশেষে এ আইডিগুলো ব্যবহার করে বিভিন্নমুখী, বিচিত্র প্রতারণার জাল বিস্তার করাই ছিল তার পেশা।
র্যাবের দাবি, আটক নবিন অসংখ্য নারীকে টার্গেট করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিওতে তাদের মাথা জুড়ে দিয়ে চরিত্র হনন এবং তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এভাবে তিনি স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতেন। পরিকল্পিতভাবে ভেঙ্গে দিতেন দীর্ঘ দিনের সাজানো সংসার। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ফরমায়েশ নিয়েও তিনি এ কাজটি করতেন। তার ছবি বিকৃতির তালিকা থেকে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা বিদেশি সরকারপ্রধানেরাও বাদ পড়েননি।
মামলার এজাহারের সঙ্গে তার অপরাধের ১৩৯ পৃষ্টার স্ক্রিনশট জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব সূত্র।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ পর্যন্ত র্যাবের কর্মকর্তা, টেলিভিশন উপস্থাপিকাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক এবং একই নাম ও ছবি ব্যবহার করে আইডি বানিয়ে তাদের ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহার করে অভিনব সব উপায়ে সাইবার অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন নবিন।
চিত্রনায়িকা মৌসুমী, সংগীত শিল্পী কৌশিক হাসান তাপসসহ আরো অনেকেরই ফেসবুক আইডি হ্যাক করার জন্য তিনি টার্গেট করেছিলেন মর্মেও প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা।
বাংলা৭১নিউজ/বিএ