বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ফেসবুকে আত্মহত্যার চেষ্টার ভিডিও আপলোড করে সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করলেন মডেল সাবিরা হোসাইন। আজ মঙ্গলবার মিরপুরের বাসা থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে পুলিশ নিহত মডেলের প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনক নামে এক যুবককে আটক করেছে। এদিকে মডেল সাবিরার আত্মহত্যার আগে আপলোড করা আত্মহত্যার চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওটি দুই হাজারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, মডেল সাবিরা মিরপুরের রূপনগর এলাকার ১২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসার ছয়তলায় আনোয়ার নামে এক ব্যক্তির বাসায় সাবলেট হিসেবে থাকতেন। ছয় মাস আগে প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে স্বামী পরিচয় দিয়ে ওই বাসাটি ভাড়া নেন তিনি। এরপর দুজনে সেখানে একসঙ্গে থাকতেন।
তাদের দুজনের প্রেমের বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি ছিল। সম্প্রতি সাবিরা নির্ঝরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের জন্য চাপ দিলে নির্ঝর তা নিয়ে টালবাহানা করেন। এমনকি নির্ঝরের ছোট এক ভাই সাবিরাকে গালাগাল করে একদিন তাদের বাড়ি থেকে বেরও করে দেয়।
পুলিশ জানায়, আত্মহত্যার আগে সাবিরা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ও একটি ভিডিও আপলোড করেন। নয় মিনিটের ওই ভিডিওতে সাবিরাকে ছুরি হাতে একাধিকবার পেটে ঢোকানো ও গলা কাটার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এ সময় প্রেমিক নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে অভিমানি কণ্ঠে অনেক কিছু বলেন। স্ট্যাটাসে সাবিরা নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমার প্রতি অভিযোগ নয়, এটা তোমার ছোট ভাইয়ের প্রতি অভিযোগ। সে আমাকে যা ইচ্ছা বলেছে। প্রত্যয় আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
আমার প্রশ্ন হলো- তোমার এক ফোঁটাও ফিল হয় নাই?’ সাবিরা তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমাকে ব্যবহার করবা, এভাবে সরে যাবে তা তো কোনো কথা না। চাইলেই আমাকে ডাকবা, আমিও ভালোবাসার টানে চলে আসবো, তাই না? বিয়ের কথা বললেই তোমার পরিবার অসুস্থ হয়ে যায়, আর…। যৌনদাসি হয়ে গেলাম। ভালো, ভালো আমি সুইসাইড অ্যাটেম্প করছি, তার কারণ হলো নির্ঝর সিনহা রওনক। আমি যদি মারা যাই, তাহলে এর দায় হলো তার।’
পুলিশের ধারণা, এ স্ট্যাটাস আপলোড করার পরপরই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আত্মহত্যা করেন সাবিরা।
ভোর ৪টা ২৪ মিনিটে এ স্ট্যাটাসটি আপলোড করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, স্ট্যাটাসটি আপলোড করার পর সকালে সাবিরার প্রেমিক নির্ঝর ওই বাসায় যান। সেখানে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পেয়ে তিনি বাড়িওয়ালাকে প্রথম ঘটনা জানান। পরে রূপনগর থানায় খবর দিলে পুলিশের একটি দল ওই বাসায় গিয়ে দরজা ভেঙে সাবিরার লাশ উদ্ধার করে।
স্বজনরা জানান, সাবিরার বাবার নাম মনির হোসেন। তিনি দুবাই প্রবাসী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন হাজীগঞ্জে। সাবিরার যখন সাড়ে তিন বছর বয়স তখন মা দিলশাদ কাদিরের সঙ্গে মনির হোসেনের বিচ্ছেদ হয়। এরপর বাবা মনির মেয়ের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের খরচ দিয়ে আসছিলেন। সাবিরা ঢাকার একটি স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেও ও লেভেল পরীক্ষায় অংশ নেননি। এর আগেই মডেলিং জগতে প্রবেশ করেন। তার চলাফেরাও অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠে। এজন্য বাবাও তার ভরণপোষণের খরচ বন্ধ করে দেন।
স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাবিরা প্রিন্ট মডেলিং ও কয়েকটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও মডেলিং করেছেন। এছাড়া মোহনা টিভিতেও কাজ করেছেন। সর্বশেষ গানবাংলা টেলিভিশনে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। মিডিয়ায় কাজ করতে গিয়ে নির্ঝরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নির্ঝর ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন। পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনের মধ্যে প্রেম হয়। তাদের অবাধ মেলামেশার বিষয়টি দুই পরিবারই জানতো। এমনকি নির্ঝর সাবিরার মাকে শাশুড়ি মা হিসেবেই সম্বোধন করতেন।
সূত্র জানায়, মাস ছয়েক আগে মায়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সাবিরা তার প্রেমিকের সঙ্গে রূপনগরের ওই বাসায় ওঠেন।
রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন কবীর জানান, এ ঘটনায় মেয়েটির মা দিলশাদ কাদির বাদী হয়ে রূপনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
এদিকে আত্মহত্যার আগে পোস্ট করা মডেল সাবিরার আত্মহত্যার চেষ্টার ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওতে সাবিরাকে ছুরি হাতে আবেগী কথাবার্তা ও বারবার চোখের পানি মুছতে দেখা গেছে।
সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভিডিওটি দুই হাজারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে। মন্তব্যের ঘরেও সাবিরার অনেক বন্ধু নিজেদের আবেগ প্রকাশ করে মন্তব্য পোস্ট করেছেন। অনেকেই সাবিরার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, সাবিরার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। খবর পেয়ে সাবিরার মামা মর্তুজা কাদিরসহ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে যান। তবে তারা সাবিরার আত্মহত্যা ও পরিবার সম্পর্কে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
স্বজনরা জানান, সাবিরার লাশ মর্গের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে। আজ বুধবার তার লাশ গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে দাফন করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/আরএম