বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার কনটেন্ট অপসারণ বা বন্ধ করার আইনগত ক্ষমতা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নেই বলে দাবি করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি পাঠানো এক ই-মেইলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়। অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পর্যালোচনা করে বিটিআরসির এ ক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীকে গত মাসে এক ই-মেইল পাঠান ফেসবুকের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের হেড অব কানেক্টিভিটি পলিসি অশ্বনি রানা। ফেসবুকের নিজস্ব লিগাল টিমের মতামত উল্লেখ করে এতে বলা হয়, বিটিআরসির গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার কনটেন্ট বন্ধের আইনগত কোনো ক্ষমতা নেই।
আইন অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিটিআরসির এ ধরনের নির্দেশনা দেয়ার ক্ষমতা থাকলেও, কোনো ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার জন্য তা প্রযোজ্য নয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এক চিঠির মাধ্যমে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এ ই-মেইলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে অনুরোধ করা হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চিঠিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পর্যালোচনার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ-সংশ্লিষ্ট ধারা পর্যালোচনা করে কমিশন। এ আইনের ধারা ৮ অনুযায়ী, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে— এমন যেকোনো তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা এর কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে অথবা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে— এমন তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার অনুরোধ পেলে সরকারকে অবহিত করার মাধ্যমে বিটিআরসি তাত্ক্ষণিকভাবে তা অপসারণ বা ব্লক করবে।
আইনের পর্যালোচনায় ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার ক্ষমতা নিজেদের রয়েছে বলে মনে করছে টেলিযোগাযোগ খাতের
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। ফলে ফেসবুকের এ-সংক্রান্ত দাবি সঠিক নয় উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি ই-মেইল পাওয়া গেছে। তাতে ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্লক করার বিষয়ে বিটিআরসির ক্ষমতা নেই বলে মন্তব্য করা হয়েছে। যদিও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিটিআরসিকে এ-সংক্রান্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নিউজ পোর্টালসহ ৫৮টি ওয়েবসাইট ও লিংক বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারের নির্দেশে ৯ ডিসেম্বর এসব সাইট বন্ধে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েগুলোকে (আইআইজি) নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। নিউজ পোর্টালগুলোর পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১১ ডিসেম্বর সবগুলো সাইট খুলে দেয়া হয়। তবে একই দিন চারটি নিউজ পোর্টাল বাদ দিয়ে ৫৪টি ওয়েবসাইট ও লিংক আবারো বন্ধ করে দেয়া হয়।
গত মাসেই ইন্টারনেটভিত্তিক জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম স্কাইপে বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। এর আগেও বিভিন্ন সময় দেশে ফেসবুক, ইউটিউব ও ব্লগ সাইট বন্ধের বিষয়ে নির্দেশনা কার্যকর করেছিল কমিশন। ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারসহ অন্যান্য কারণে সামাজিক যোগাযোগ ও ভিডিও কনটেন্ট শেয়ারিংয়ের এসব সাইট বন্ধ রাখা হয়।
২০১৫ সালে জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশে ২২ দিন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বেশ কয়েকটি অ্যাপ বন্ধ করেছিল সরকার। গত বছরের এপ্রিলেও শিক্ষার্থীদের জন্য রাতে ৬ ঘণ্টা করে ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়ে বিটিআরসির মতামত চেয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর জবাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বন্ধ না রাখার পক্ষে মত দিয়েছিল কমিশন।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বণিক বার্তা/এমআর