বাংলা৭১নিউজ,(লালমনিরহাট)প্রতিনিধি: ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের চারটি উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে তীব্র নদী ভাঙন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার পরিবার।
শনিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টায়ে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর, সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্যারাজ রক্ষার্থে ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত ৪০০ ফুট বালুর বাঁধটি হুমকির মুখে রয়েছে। প্রথম দফায় বন্যার কবল রক্ষা পেলেও এখন সেই বাঁধটিই ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জানা গেছে, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলের কারণে তৃতীয় দফায় তিস্তা নদীর চর এলাকাগুলোতে লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধিতে চরের কৃষকরা ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উজানের পানি ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তায় দেখা দিয়েছে বন্যা। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা অববাহিকায় আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাঘের চর, ছয়আনী ও ফকিরপাড়া ইউনিয়নের দালালপাড়া ও রমনীগঞ্জ গ্রামের তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর ভাঙনে প্রায় দুইশ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে বাঁধের রাস্তায় গিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নের চরের লোকজন তৃতীয় দফায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলোর জন্য আবারও সরকারি সাহায্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, পানি নেমে যাওয়ার ৫ দিন না পেরুতেই শনিবার সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী অববাহিকার পরিবারগুলো ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নতুন করে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
নদীগর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়া ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ গ্রামের বাবুল হোসেন বলেন, গত ৬ দিন ধরে ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে অসহায় অবস্থায় আছি। এখন পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি। সরকার থেকে কোনো সাহায্যও পাইনি। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, উপজেলায় নদীর ভাঙনের শিকার প্রায় দুইশ পরিবারের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সাহায্য আসলে পরিবারগুলোর মাঝে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চর ও উপকূল এলাকার মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি আরও বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, তিস্তাপাড়ে তৃতীয় দফায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জেলায় নতুন করে চরবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে