বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: রোজাদাররা রোজাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য রোজার শেষাংশে এবং ঈদের আগে যে দান করে থাকেন সেটাই সদকাতুল ফিতর। আমাদের দেশে ‘ফিতরা’ কথাটির ব্যাপক প্রচলন হলেও কোরআন-হাদিসে এটাকে সদকাতুর ফিতর, জাকাতুল ফিতর বা জাকাতে রমজান নামে অভিহিত করা হয়েছে। ফিতরা আদায়ের প্রধান সময় ঈদুল ফিতরের দিন সকালে, ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে। তবে যাদের ফিতরা দেয়া হয় তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে রমজানের শেষ দশক শুরু হওয়ার পর থেকেই সাধারণত ফিতরা আদায় করা হয়।
জাকাতের মতোই ফিতরা ইসলামের একটি আর্থিক ইবাদত। জাকাতের সঙ্গে ফিতরার পার্থক্য হলো, নিসাব বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ ও সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মালিক থাকা অবস্থায় এক বছর অতিবাহিত হলে জাকাত ফরজ হয়; কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত নেই। ঈদের দিন সকালে যদি কেউ ওই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তার ওপরও ফিতরা দেয়া ওয়াজিব। খেজুর, পনির, যব, কিশমিশ, গম-এই পাঁচ ধরনের খাদ্যের যে কোনোটির নির্দিষ্ট পরিমাণের মূল্য নির্ধারণ করে ফিতরা আদায় করা যায়। ফিতরাদাতা তার সামর্থ্য অনুযায়ী এ বিষয়টি নির্ধারণ করবেন। আমাদের দেশে সাধারণত সর্বনিম্নহারে ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। যেমন এবার সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারিত হয়েছে ৬৫ টাকা। মূলত এটা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির দিকে লক্ষ করে করা হয়ে থাকে। অধিক স্বচ্ছল ও বিত্তবান শ্রেণির জন্য সর্বোচ্চ হারে ফিতরা আদায় করা উচিত। এবারের নির্ধারণ অনুযায়ী তা এক হাজার নয়শত ৮০ টাকা।
ফিতরার অন্যতম তাৎপর্য হলো, ঈদের আনন্দে গরিব-দুঃখী মানুষদেরকে শরিক করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহাপুরস্কার বা আনন্দের দিন হিসেবে যে দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে সেই দিনের আনন্দ যেন সার্বজনীন হয়। হাদিসে ফিতরা দিয়ে একদিনের জন্য হলেও গরিব মানুষদের অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষি হওয়ার মতো দুরাবস্থা দূর করতে মুসলমানদের উৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ফিতরার আরেকটি গূঢ় তাৎপর্য হচ্ছে, রোজাদারের এক মাসের রোজায় মান ও পূর্ণতায় যেসব বিচ্যুতি ও ত্রুটি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া। এতে প্রথমত আমাদের রোজাটি ত্রুটিমুক্ত হয়ে যাবে, দ্বিতীয়ত গরিবের আর্থিক কিছু উপকার হবে। ধনীদের সম্পদে আল্লাহ তায়ালা গরিবের যেসব অধিকার রেখেছেন এর মধ্যে ফিতরা একটি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর ফিতরা ওয়াজিব।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস