বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: বালাকোটে বিমান হামলায় সাড়ে ৩০০, ৩৫০ ইত্যাদি সংখ্যার পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যস্ত ছিল ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু রয়টার্সের প্রতিবেদনে আসলো একজন আহতের খবর।
পাকিস্তানি টিভি চ্যানেলের বিখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর সরাসরি ওই এলাকায় সচিত্র প্রতিবেদন করে দেখিয়েছেন সেখানে অস্বাভাবিকতার কিছুই নেই। একটি মৃত কাক পেয়েছেন কেবল।
দুই দেশের মিডিয়ায় যখন পরষ্পরবিরোধী সংবাদ দেখায় ঠিক ওই সময় ঘটে ভারতীয় বিমান ভূপাতিতের ঘটনা। তার চেয়েও বড় ঘটনা হয়ে ওঠে বিমানের পাইলট আটকের খবর। কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত ৪৯ জনের ঘটনা আর বালাকোটে বিমান হামলার খবরকে ছাপিয়ে পাইলট অভিনন্দনই হয়ে ওঠে বিশ্ব মিডিয়ার মূল আলোচনার বিষয়।
এতে মূলত মোদির বাড়া ভাতে ছাই পড়ে। কারণ, জঙ্গি দমনের নামে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধিয়ে নির্বাচনী ফায়দা লুটতে চেয়েছিলেন বিজেপি সমর্থিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগের দিনটি ছিল পুরোপুরি মোদির। পাকিস্তানের আকাশে ঢুকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের পর ভারতজুড়ে আবারও ‘মোদি’, ‘মোদি’ রব উঠেছিল।
বিজেপি মহলে মিষ্টি বিতরণের ছড়াছড়ি। পরের দিন পাল্টা হামলায় ভারতের দুটি বিমান ভ‚পাতিত ও এক পাইলটকে আটক করে মোদির হাসিমাখা মুখ চুপসে দিলেন ইমরান খান । দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে হুমকি-ধমকির বার্তা নিয়ে হাজির মোদি।
২৪ ঘণ্টা না গড়াতেই বড় চমকটা দিলেন ইমরান-আটক পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ছেড়ে দেয়ার ঘোষণায়। বলা যায়, মোদির ফুল টস বলে সোজা বাউন্ডারি পার- ছক্কা।
শান্তির বার্তা ছড়িয়ে রাতারাতি কূটনৈতিক অভিনন্দন নিজের দিকেই ঘুরিয়ে নিলেন ইমরান খান। বিশ্ব নেতাদের প্রশংসায় সিক্ত হন মোদি। এমনকি ভারতের বিচারপতি, খেলোয়াড় ও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ইমরানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
পাকিস্তানের জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের প্রশংসা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব, তুরস্ক, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ব্যাপক প্রশংসা করেন।
এদিকে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সুযোগে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জিসহ ভারতের বিরোধী নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মোদির বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে মোদির আম-ছালা দুই-ই গেল!
যুদ্ধের দামামার মধ্যে শান্তির পক্ষে ইমরান খানের প্রচেষ্টা ঘরে-বাইরে প্রশংসিত হচ্ছে। আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে ইমরানকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
টুইটারে ইমরানকে নোবেল দেয়ার দাবিতে হ্যাশট্যাগ ঝড় তুলেছেন তারা। পাকিস্তানজুড়ে টুইটার ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে ‘নোবেল প্রাইজ ফর ইমরান খান’ হ্যাশট্যাগ।
ভারতীয় ঔপন্যাসিক কৃষ্ণ প্রতাপ সিং টুইটারে লিখেছেন, ‘যুদ্ধের মাঠে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে হারিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।’
ভারতের সাবেক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিবিদ নভোজিৎ সিং সিধু টুইটারে ইমরানের পদক্ষেপকে মহানুভবতা বলে অভিহিত করেন। তিনি লেখেন, ‘ইমরানের বন্ধুত্বের মনোভাব ভারতের কোটি কোটি মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার এনে দিয়েছে।’
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা অজয় শুক্লা টুইটারে লিখেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যা-ই ঘটুক না কেন, বোধের যুদ্ধে পাকিস্তান বড় জয় পেয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইটারে লিখেছেন, ইমরান সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়কোচিত মনোভাব দেখিয়েছেন।
পাক প্রধানমন্ত্রীকে ‘নায়ক’ সম্বোধন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেন, ‘এটি সত্যিই রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ।’ মোদির ‘মেরা জওয়ান সবসে মজবুত’ বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করে প্রচার করছে কংগ্রেস!
সব মিলিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার মাঠ থেকে মোদি কিক আউট হওয়ার উপক্রম। পুলওয়ামা-কাণ্ডকে পুঁজি করে তিনি যে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় ছিলেন, তা একেবারে মাঠে মারা গেছে। এখন তার দিকে ধেয়ে যাচ্ছে একরাশ প্রশ্নের তীর। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে আসন্ন নির্বাচনের ভোট বাগাতে যুদ্ধের রাজনীতির অভিযোগও আনা হচ্ছে।
এদিকে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের বিমান হামলায় ৩০০ জঙ্গি নিহতের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘বোমা কোথায় পড়েছে, সেটি কি তাহলে মিস হয়েছে।’
বাংলা৭১নিউজ সূত্র: আলজাজিরা, আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জিনিউজ, ডন।