শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য ৯৪০ প্রশ্ন ভরিতে আরও ১৮৭৮ টাকা কমলো সোনার দাম সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান: ইসি আলমগীর টোল আদায়ে দুর্নীতি, দুদকের হস্তক্ষেপে ইজারা বাতিল রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : কাদের এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ১৯৩ নারী-শিশুকন্যা ৯ মে পর্যন্ত চলবে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ মৃত ব্যক্তিদের জাল সনদ: মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত : তথ্য প্রতিমন্ত্রী যাত্রীবাহী বাস থেকে ৭টি স্বর্ণের বারসহ চোরকারবারি আটক আমন মৌসুম থেকেই চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ করা হবে : খাদ্যমন্ত্রী টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

ফারাক্কার সব গেট উন্মুক্ত : ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
  • ১৫১ বার পড়া হয়েছে
ফারাক্কার বাঁধ উন্মুক্ত করে দেয়ায় প্লাবিত কুষ্ঠিয়ার নিম্নাঞ্চল

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশের সাথে আলোচনা না করে অকস্মাৎ গঙ্গা নদীর পানি ছেড়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। বিষয়টি ভারতকে অবহিত করা হয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশকে কোন প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে এভাবে পানি ছেড়ে দেয়াটা ‘গঙ্গা’ নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে উভয় দেশ একমত হয়েছে যে, বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোন পদক্ষেপ নিবে না।

বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট উন্মুক্ত করে দেয়ার আগে বাংলাদেশকে পরিস্থিতি সামলে উঠার জন্য অন্তত ১৫ দিন সময় দেয়া হবে। আর গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তিতে বলা আছে, সমতা, ন্যায়ানুগতা ও পারস্পরিক ক্ষতি না করার ভিত্তিতে সবকিছু ঠিক করা হবে।

প্রয়োজনে দুই দেশের সরকার প্রতি পাঁচ বছর পরপর গঙ্গার পানি প্রবাহ ও ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসবে। কিন্ত বাংলাদেশকে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সুযোগ না দিয়ে কিম্বা কোন আলোচনা না করেই ফারাক্কার সব গেট উন্মুক্ত করে দেয়াটা যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তির বরখেলাপ বলেই মনে করছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

তাদের মতে, বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বাংলাদেশকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার নীতি সমর্থনযোগ্য নয়। প্রসঙ্গত, ফারাক্কার সব গেট উন্মুক্ত করে দেয়ায় গঙ্গানির্ভর পদ্মা ও এর শাখা নদীসমূহের পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গঙ্গানির্ভর এসব নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করে।

কয়েকটি স্থানে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেক এলাকার বাড়ী-ঘর, ক্ষেতের ফসল। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে চলছে নদী ভাঙ্গন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ, ব্রীজ, কালভার্ট। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ভারতের এধরনের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের প্লাবিত এসব এলাকার বিপদগ্রস্ত মানুষগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও ওষুধ সামগ্রীর অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে যেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিত খেতে হচ্ছে। যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ভারতের গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে।

এরই আলোকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের মধ্যে ১০৪টি গেট উন্মুক্ত করে দেয়। শুধুমাত্র ৫টি গেট বন্ধ রাখা হয় ভাগীরথী নদীতে ৪০ হাজার কিউসেক পানি ধরে রাখার জন্য। বাকি গেটগুলো উন্মুক্ত করে দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিন ১৫ লাখ কিউসেক পানি ঠেলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই গত ২৪ আগস্ট ফারাক্কা বাঁধের এসব গেট উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

ফারাক্কার এই বাঁধটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়; এটি ভারতের জন্যও বিপজ্জনক বাঁধে পরিণত হয়েছে। একচল্লিশ বছর আগে গঙ্গার উপর যখন ফারাক্কা বাঁধ চালু করার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গঙ্গার পানিপ্রবাহের একটি অংশকে হুগলী নদীতে নিয়ে যাওয়া এবং এই পানির মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা। ভারতের সেই স্বপ্ন এখন বিহারের জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। সে বিষয়টিই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেছেন।

এদিকে, ভারত ফারাক্কার সব গেট উন্মুক্ত করে দেয়ার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছে। মুখ খুলছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পুরো পরিস্থিতিকেই আড়াল করে রাখার একটা প্রবণতা চলছে। বাস্তব অবস্থার সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যের রয়েছে অনেক গরমিল।

যদিও যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ফোনে ভারতের যৌথ নদী কমিশনের সদস্যের সাথে কথা বলেছেন। আর পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্লাবিত এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছেন নিজেই ফোন করে। এমনকি রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের ফাটল নিয়েও কথা বলেছেন সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে। নির্দেশনাও দিয়েছেন যাতে করে বাঁধের কোন ক্ষতি না হয়।

প্রয়োজনে বাঁধ রক্ষায় যেকোন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও রয়েছে তার। এ ব্যাপারে পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের সাথে সীমান্ত নদীসহ বেশ কিছু সমস্যা সমাধানে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হওয়াটা খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন, এই বৈঠকের ব্যপারে ভারতকে তাগিদ দিয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। তারও কোন উত্তর মেলেনি।

আর যৌথ নদী কমিশনের সাবেক সদস্য ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য কি করা যেতে পারে এবং কিভাবে এই পানি বণ্টন হবে, তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে ঐকমত্য নেই। তা ছাড়া রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনারও অভাব রয়েছে। যার কারণেই দীর্ঘ ছয় বছরেও জেআরসি’র বৈঠক বসেনি।

উল্লেখ্য, জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের সর্বশেষ ৩৭তম বৈঠকটি বসেছিল ২০১০ সালে মার্চে দিল্লীতে। আর ৩৮তম বৈঠকটি হওয়ার কথা ঢাকায়। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮-১৯ জুন ঢাকায় জেআরসি’র ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুুতিও নেয়া হয়েছিল। ওই সময় ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্ত প্রস্তুতির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দিল্লীর পক্ষ থেকে বৈঠকটি বাতিল করা হয়।

যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উজানে ভারত যে কয়টি বাঁধ নির্মাণ করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ।

এছাড়াও তিস্তায় গজলডোবা বাঁধ, মনু নদীতে নলকাথা বাঁধ, যশোরে কোদলা নদীর উপর বাঁধ, খোয়াই নদীর উপর চাকমা ঘাট বাঁধ, বাংলাবন্ধে মহানন্দা নদীর উপর বাঁধ, গোমতি নদীর উপর মহারানি বাঁধ, মুহুরি নদীর উপর কলসী বাঁধ, উমিয়াম ও ধালা নদীর উপর মাওপু ড্যাম এবং সারী ও গোয়াইন নদীর উপর মাইন্ডু ড্যাম নির্মাণ করেছে।

আর বরাক নদীর উপরেও ভারত নির্মাণ করছে শক্তিশালী স্থাপনা। ভারত মূলত শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি আটকাতেই এসব বাঁধ নির্মাণ করে। বর্ষায় এসব বাঁধের অধিকাংশ গেটই উন্মুক্ত রাখা হয়। ফলে এই বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ চরম পানি সঙ্কটের কবলে পড়ে।

আর বর্ষায় এদেশের নদ-নদীগুলো উজান থেকে নেমে আসা পানি ধারণ করতে পারে না। ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দেয়। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এক দফা এবং অনেক এলাকায় দু’দফা বন্যা দেখা দিয়েছে।

বন্যার এসব ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে; ঠিক সেই মুহূর্তে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: ইনকিলাব

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com