বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: দু’দেশের ফুটবল ইতিহাসে অদ্ভুত মিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে রাশিয়ার আবির্ভাব ১৯৯৪ সালে আমেরিকায়। যুগোস্লাভিয়ার থেকে বেরিয়ে এলেও ক্রোয়েশিয়া অবশ্য সেই বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি টেকনিক্যাল কারণে।
১৯৯২ সালে ফিফা এবং উয়েফার স্বীকৃতি পেলেও বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলা তার অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে, আমেরিকায় নামতে পারেননি ক্রোটরা। অবশ্য সেই আক্ষেপ যেন সুদে–আসলে মিটিয়ে নিয়েছিল ১৯৯৮ সালে, ফ্রান্সে। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছিল ক্রোয়েশিয়া।
২০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের হাতছানি ক্রোয়েশিয়ার সামনে। মাঠে মডরিচ, রাকিটিচদের পারফরমেন্স অনেকেই ৯৮ বিশ্বকাপের দাভোর সুকের, স্লাভেন বিলিচদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পূর্বসূরিদের ইতিহাসে নাম লেখানোর সুযোগ অবশ্য পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চাইছে এই ক্রোট শিবির।
মডরিচের দলের অন্যতম স্তম্ভ পেরিসিচ যেমন বলেই দিলেন, ‘জানি, আমাদের দুই প্রজন্মের দুটো দলকে নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। ওঁরা ফ্রান্সে দেশের ফুটবলের ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। আমরাও এখন অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছি। এবং আশা করছি, এবার কিছুটা হলেও ভাল করতে পারব। এই দলটার দক্ষতা এবং নিজেদের ওপর সেই বিশ্বাস রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, এই মুহূর্তে আমরা সঠিক লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।’ সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে রাকিটিচের সতর্কিত মন্তব্য, ‘ওঁদের কৃতিত্বকে সম্মান করেই বলছি, এই মুহূর্তে আমাদের ও–সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মাঠে নামা উচিত।’
রাশিয়া ম্যাচের আগে রাকিটিচের বার্তা যেন কিছুটা হলেও দলের ওপর প্রভাব ফেলেছে। গত ২০ বছরে ফুটবল অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সেই যুক্তি খাড়া করে আন্তে রেবিচ বলেছেন, ‘ওঁরা দুর্দান্ত সাফল্য এনে দিয়েছিলেন এ বিষয়ে সংশয়ের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু ২০ বছরে ফুটবল অনেক বদলেছে। আমাদের এই দলটাও দারুণভাবে এগোচ্ছে। পুরো দেশের সমর্থন রয়েছে। একইরকম সাফল্যের ব্যাপারে আমরাও আশাবাদী।’ একধাপ এগিয়ে ভিদা বলেন, ‘এবার লক্ষ্য অনেক ওপরে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, ফাইনালেও আমাদের দেখা যাবে।’ রাশিয়ায় দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন মডরিচ। সে প্রসঙ্গে ভিদা বলেন, ‘মডরিচ দলের অধিনায়ক। আমাদের নেতা। পুরো দল ওর পাশে রয়েছে। ওর মতো ফুটবলার দলে থাকলে এমনিই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।’
বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভাবে সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ২০০২, ২০০৬, ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগ থেকেই বিদায় নিয়েছিল। ২০১০ সালে তো দক্ষিণ আফ্রিকার ছাড়পত্রই জোগাড় করতে পারেনি তারা। ইউরো কাপেও ব্যর্থতার একই ছবি। তবে রাশিয়ায় সেটা বদলে ফেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী পুরো ক্রোট শিবির। নাইজেরিয়া ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামতে না চাওয়ায় দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নিকোলা কালিনিচকে।
সেটা মনে করিয়ে দিয়ে রেবিচ বলেছেন, ‘আশা করি দলের মানসিকতা বোঝার জন্য এটাই যথেষ্ট। গত দেড় মাস ধরে আমরা সকলেই একসঙ্গে রয়েছি। সেখান এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, যা ফুটবলারদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে।’ আর পেরিসিচের কথায়, ‘একসময় নিজেকে এই জায়গায় দেখার স্বপ্ন দেখতাম। দেশকে সেই একইরকম সাফল্য এনে দেওয়ার সুযোগ এসেছে। সুতরাং সেটা কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাই না।’
বাংলা৭১নিউজ/বিকে