বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের নেপালে ‘বিজনেস ভিসা’ দেয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং নেপালী নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্থলবন্দরে ‘অন-এ্যারাইভাল ভিসা ইস্যু নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এবং নেপালের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের দু’দিনব্যাপী এক সভা আজ শেষ হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এটি ছিল বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের ৩য় সভা।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স হলে আনুষ্ঠানিকভাবে দু’দিনের এ সভা শুরু হওয়ার পর বন্ধু-প্রতীম এ দু’শের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় আলোচিত ভিসা সংক্রান্ত বিষয়টি নিজ-নিজ দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে এর সমাধান করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সভায় ৯ (নয়) সদস্যবিশিষ্ট নেপালী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন নেপালের বাণিজ্য সচিব নায়ন্দ্র প্রসাদ উপাধ্যায়া। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ১৮ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।
সভায়,বলা হয়, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির বহুমাত্রিক সম্ভাবনা থাকলেও প্রকৃত বাণিজ্যের প্রসার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অর্জিত হয়নি।
নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদার কথা উল্লেখ করে এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে নেপালে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেপালী প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়।
সভা শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ভারসাম্য বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও তা সম্ভাবনার তুলনায় অপ্রতুল। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপরীতে বাংলাদেশে নেপালি পণ্যের আমদানির পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে-সাথে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মিটাতে নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানির সম্ভাবনার বিষয়টি আমরা জানিয়েছি। অপরদিকে,নেপাল স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে রেল এবং সড়ক পথে ট্রানজিটের মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে উৎসাহ দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ট্রানজিট বাণিজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এবারের সভায় বিশেষ করে পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুল্ক সুবিধা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। টেকনিক্যাল ব্যারিয়ার টু ট্রেড (টিবিটি) দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেসটিং ইন্সটিটিউট এবং নেপাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডস্ এন্ড মেট্রোলজি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তাছাড়া সেনেটারি ও ফাইটো সেনেটারি (এসপিএস) বিষয়ে পৃথক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠিত সভায় উল্লেখযোগ্য যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় সেগুলো হচ্ছে,বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে ট্রানজিট কার্গো পরিবহনের পদ্ধতি নির্ধারণ; কাকরভিটা-পানিট্যাংকি-ফুলবাড়ি বাণিজ্য পথ পুরোপুরি চালু করণ; রেল যোগাযোগ স্থাপন (রোহনপুর-সিংবাদ রেলপথ ব্যবহার করে নেপালে পণ্য পরিবহন করা); এক দেশ অপর দেশের বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ; দু’দেশের মধ্যে সমন্বিত পর্যটন শিল্প বৃদ্ধি; নেপালের জলবিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশি বিনিয়োগ; ফার্মাসিটিউক্যাল পণ্যের নিবন্ধন পদ্ধতি সহজীকরণ এবং বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন ও পাবলিক ট্রেডিং কর্পোরেশন অব নেপালের মধ্যে সরকারী পর্যায়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরাসরি ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক।
দু’দিনের বৈঠক শেষে নেপালের প্রতিনিধিদল আগামীকাল নিজ দেশের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস