ফরিদপুরে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সক্ষমতার তিনগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে। এতে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝে ও সিড়িতেও বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের।
সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বৃস্পতিবার (২০ জুলাই) জরুরি বিভাগের দ্বিতীয় তলায় ৩৭টি শয্যা বিশিষ্ট একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ডে ডেঙ্গু চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয়।এটি করোনার সময় আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মোট ৩৭টি শয্যা থাকলেও ওই হাসপাতালে রোববার (২৩ জুলাই) সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যা ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সক্ষমতার তিনগুণেরও বেশি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৩৭ জন রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত বাকি ৮৩ জন রোগীকে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে দ্বিতীয় তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-১, তৃতীয় তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-২ও ৩ এবং তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ২ ও ৩ এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয় তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-১ এর মোট শয্যা রয়েছে ৪৪টি। সেখানে রোগী ভর্তি আছে ৬৬ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ৭ জন। তৃতীয় তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-২ও ৩ এ মোট শয্যা আছে ৩০টি। এ দুটি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছেন ১২২ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ২ ও ৩ এ মোট মোট শয্যা আছে ২৬ টি। এখানে রোগী ভর্তি আছেন ২০৩ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ৪৮ জন।
তৃতীয় তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-২ এর মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা যায় লাইলি বেগম নামে এক নারীকে। তিনি সদরপুরের চরবিষ্ণুপুরের বাসিন্দা। তার শয্যার উপর কোনো ফ্যান নেই, স্যালাইন ও মশারি টানানোর স্ট্যান্ড নেই। এছাড়া দ্বিতীয় তলায় সিড়ির মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন নগরকান্দার নিহারুননেসা (৫২), তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ২ ও ৩ এ তিনজন শয্যা না পেয়ে বারান্দায় দুইজন ও ওয়ার্ডের মেঝেতে একজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা হলেন, আকিদুল ইসলাম (২২), মো. মুরসালিন ইসলাম (২০) ও আরিফুল ইসলাম (২৮)।
তারা জানান, নার্সদের কাছে সাধারণ শয্যার আবেদন জানালে নার্সরা জানিয়েছে শয্যা ফাঁকা হলে তাদেরকে জায়গা দেওয়া হবে।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মৌমিতা ঘোষ বলেন, এই ওয়ার্ডের কোনো রোগী ছাড়া পেয়ে শয্যা ফাকা হলেই নতুন রোগী ঢোকানো হয়। তবে কোনো রোগী সাধারণ ওয়ার্ডে ও কোন রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিবেন সেটা চিকিৎসকেরাই ঠিক করেন।
এদিকে ফরিদপুরে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৫ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৮, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪, নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ২, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৬, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২, আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৭, সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ এবং চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ফরিদপুরে দ্রুত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য আমাদের নিজে থেকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে।রোগী বাড়তে থাকায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তারপরও স্থান সংকুলান না হওয়ায় অন্যান্য ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি