পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর জেলা। পেঁয়াজ উৎপাদনে এক সময় বীজের জন্য চেয়ে থাকতে হতো জেলার কৃষকদের। তবে সে দিন শেষ। বর্তমানে জেলাটিতে ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ বীজের। দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করছে ফরিদপুরের কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে এ জেলায় সবমিলিয়ে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন ৪০০ কোটি টাকার বাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয়ে কালো দানা বা বীজ। এ বীজের দাম অনেক। তাই তো স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ‘কালো সোনা’। আর কালো সোনা চাষে ঝুঁকছে ফরিদপুরের চাষিরা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশা, এ বছর ফরিদপুরে ৯৬৪ টন বীজ উৎপাদিত হবে।
জেলার ৯ উপজেলায় পেঁয়াজ বীজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮২০ হেক্টর জমি। কিন্তু তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে এক হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায়।
ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা পুরো দেশে প্রচুর। যার মধ্যে ২৮০ টন স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হবে এবং বাকি ৬৮৪ টন সারা দেশে সরবরাহ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বীজে ভাল লাভ পাওয়ায় এ ফসলের দিকে ঝুঁকছে উদ্যোক্তা ও কৃষক। একইসঙ্গে মাঠে কাজ করে ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারছেন দিনমজুর শ্রমিকেরা। পেঁয়াজের বীজ খেতে কাজ করে একজন দিনমজুর প্রতিমাসে আয় করছেন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। বছরের অর্ধেক সময় কাজ করা যায়। এতে একজন শ্রমিক প্রতি মৌসুমে প্রায় লাখ খানেক টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।
ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের খ্যাতনামা কৃষাণি শাহেদা বেগম। দেড় যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘এবার ফলন অত্যন্ত ভালো হবে। আমি ১০০ একর জমিতে বীজের চাষ করেছি। এবারের পেঁয়াজের ফুলে দানা এসেছে বেশ ভালো। আবহাওয়া সহায়ক থাকলে বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাওয়া যাবে।
তবে মৌমাছির অভাবে চাষিরা এখন হাতে পরাগায়ন করছেন, যা প্রাকৃতিক পরাগায়নের তুলনায় কিছুটা কম ফলপ্রসূ।
শাহেদা বেগমের স্বামী বক্তার খান জানান, ‘মৌমাছির সংকটের কারণে পরাগায়নের মাত্রা কমে আসছে। কিন্তু তারপরও তারা হাত দিয়ে পরাগায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো বীজের উৎপাদন হবে। অধিদপ্তর চাষিদের পরামর্শ ও সাহায্য দিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ