বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সিপিসির হেড কোয়ার্টার ও উপকূলীয় ১৯টি জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এনডিআরসি প্রতিনিয়ত সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। তা ছাড়া, ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বুধবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
বিকেলে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, রংপুর হয়ে দিনাজপুরের দিকে যেতে পারে। সেই সাথে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আঘাত হানতে পারে। তবে ফণি ৪ তারিখ সকাল নাগাদ আঘাত হানতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ঘূর্ণিঝড়টি যে ডিরেকশনে আছে সেই ডিরেকশনে যদি এগোতে থাকে তাহলে এটা প্রথমে ভারতের উড়িশায় আঘাত করবে। এরপর পশ্চিম বাংলায় আঘাত করবে। এরপর দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল হয়ে সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত করতে পারে। আর যদি দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশের দিকে আসে তাহলে খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্র্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।’
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সিপিসির হেড কোয়ার্টার ও উপকূলীয় ১৯টি জেলায়ও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এসব জেলার উপজেলা পর্যায়েও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি আছে তাদের। সিপিপির ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে। স্বেচ্ছাসেবকরা ইতোমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। ’
ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার প্র্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব জেলার প্রশাসকদের কাছে দুইশ’ মেট্রিক টন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে ৫ লাখ করে টাকাও দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। স্যালাইনের জন্য সুপেয় পানির জন্য পানির ট্রাক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ’
‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী বুধবার লন্ডনে যাওয়ার আগে তার মুখ্য সচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশা করি মানুষের হতাহতের ঘটনা আমরা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারব,’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যতটুকু সম্ভব প্রাণিসম্পদকেও যেন রাখা যায় সেজন্য আমরা স্বেচ্ছাসেবকদর নির্দেশ দিয়েছি। ’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে প্র্রস্তুতি আছে তাতে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারব। আজ ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও আমরা এখানে বসে বাংলাদেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে কাজ করছি। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় আমাদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছূটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে সবাইকে সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। ’
‘আপনারাও জানেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা রোল মডেলে পরিণত হয়েছি। আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টসহ সবগুলো সংস্থা সুনামের সঙ্গে কাজ করেছে,’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস, আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দিক পরিবর্তন হলে ফণি বাংলাদেশে ভয়াবহ আঘাত হানতে পারে :
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ছামছুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানলে তা হবে ভয়াবহ। এটি বর্তমানে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।’
এই মুহূর্তে এর গতিপথ যেভাবে রয়েছে তাতে প্রথমে এটি ভারতের উড়িশায় আঘাত করবে, এরপর পশ্চিম বাংলায় আঘাত করবে। কিন্তু এর গতিপথ যদি পরিবর্তন হয়ে সমুদ্রের কোল ঘেষে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে এটি খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্রগ্র্রাম হয়ে ভয়াবহ আকারে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি