বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো রেলের আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আজ কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে ১১ জুনের টিকিট। ভোর থেকে ব্যাপক ভিড় লেগেছে কমলাপুরে। স্টেশন ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়। যানজট ও মহাসড়কগুলোর অবস্থা ভালো না হওয়ায় এবার রেলপথের যাত্রী সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার ভোর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কমলাপুর এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, তিলধারণের ঠাঁই নেই। টিকিট প্রত্যাশীদের লাইনের শুরুটা নির্দিষ্ট থাকলেও শেষটা বের করা দুরুহ, বেলা যত বাড়ছে লাইন ততই দীর্ঘ হচ্ছে। অনেকে সেহেরি শেষে এসেছেন, সকাল ৭টার আগেই মানুষের লাইন প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে ফুটপাতে উঠে পড়ে।
টিকিট প্রত্যাশীদের অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন গতকাল রাতে। সেহেরিও করেছেন সেখানেই, আবার দুয়েকজন জানালেন গতকাল দুপুর থেকেই লাইনে আছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশন ২৬টি কাউন্টার থেকে একযোগে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। রবিবার ১২ জুন, সোমবার ১৩ জুন, মঙ্গলবার ১৪ জুন এবং বুধবার ১৫ জুনের আগাম টিকিট দেয়া হবে।
ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরতি যাত্রীদের ১০ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দেয়া হবে পর্যায়ক্রমে ১৯, ২০,২১,২২,২৩ ও ২৪ জুনের ফিরতি টিকিট। এবার ঈদের আগে পাঁচ দিন এবং পরে সাত দিন বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করবে ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেন।
টিকিট কালোবাজারি রোধে পুরো স্টেশনের সঙ্গে কাউন্টারের ভেতর ও বাইরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট দিতে স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছে রেল পুলিশ। এছাড়া র্যাবের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
ঈদের অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছেন শান্তিনগরের ইকবাল হোসেন। পরিবার নিয়ে এবার গ্রামেই ঈদ করার ইচ্ছা। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। সকালে এসেই ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করবেন এমনটাই ছিল তাঁর পরিকল্পনা। পরিকল্পনা মতোই সকাল ৭টায় কলমাপুর স্টেশনে এসে উপস্থিত। কিন্তু পৌঁছেই তার চক্ষু ছানাবড়া। লাইন এরই মধ্যে প্লাটফর্ম ছাড়িয়েছে।
ইকবাল হোসেন ঢাকাটাইমস বলেন, ‘ভাবছিলাম সকালে গেলে লাইনের আগে দাঁড়াতে পারব, কিন্তু এখন এসে তো দেখি অন্য রকম অবস্থা। লাইন একদম প্লাটফর্ম ছেড়ে রাস্তায় এসে পড়েছে। কী আর করা, এখন যত দেরি হোক টিকিট নিয়েই যাব।’
শুক্রবার বিকাল চারটায় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন আবির মিয়া। তিনি দিনাজপুরের টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছেন। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে আবির বলেন, ‘গতকাল চারটায় দাঁড়িয়েছি টিকিটের জন্য, সকাল সোয়া ৮টার দিকে কাঙ্ক্ষিত এসি টিকিট হাতে পাই। বাড়ি যাওয়ার জন্য আর কোনো চিন্তা নাই।’
যশোরের আলমডাঙা যাওয়ার জন্য টিকিট নিতে এসেছিলেন এমডি শাকিল নামের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। শাকিল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গতকালদুপুর থেকে লাইনে ছিলাম। সুন্দরবন এক্সপ্রেসের দুটি টিকিট পেয়েছি।’
পুরুষের পাশপাশি নারীদের লাইনও দীর্ঘ। তবে সেখানে চাপ কিছুটা কম। পুরুষদের চেয়ে তুলনামূলক সহজেই তারা টিকিট পাচ্ছেন। তবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত অনেক নারী পত্রিকা বিছিয়ে বসে পড়েছেন। নারীদের অনেকেই সেহেরি খেয়েই টিকিট কাটতে এসেছেন।’
টিকিট নিতে এসেছেন জামালপুরের শেফালী আক্তার। তিনি সেহেরি কমলাপুরে আসেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়েছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভোরে এসে দাঁড়িয়েছি, সাড়ে নয়টা দিকে টিকিট পেলাম। দীর্ঘ লাইন, তবে দুইটি কাউন্টার থাকায় তেমন কষ্ট হয়নি।’
বাসে টিকিট না কিনে ট্রেনের টিকিটের জন্য কেন দাঁড়িয়েছেন, এমন প্রশ্নে উত্তরে একাধিক টিকিট প্রত্যাশী জানান, মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, যানজটসহ নানা সমস্যার কারণে বাসের চেয়ে ট্রেন যাত্রাতেই তাদের আগ্রহ বেশি।
টিকিটপ্রত্যাশী হাজারো মানুষকে লাইনে রাখতে ঘাম ঝরছে কমলাপুর রেল স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মীদের। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য। টিকিট কালোবাজারে যেন না যায় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে র্যাব-পুলিশের নজরদারি।
জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন, বরাদ্দকৃত টিকিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে টিকিট বিক্রি চলবে। এবার টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬টি করা হয়েছ। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।’ সৌজন্যে: ঢাকাটাইমস।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস