শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫ নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তদন্ত চলছে: ফায়ারের ডিজি উন্নয়নের লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রাশিয়ার মিসাইলের আঘাতে ভূপাতিত হয় ওই বিমান শেষ দিনে ভিড় বেড়েছে, পছন্দের ফ্ল্যাট খুঁজছেন অনেকেই বিআরটিএ নির্ধারিত সিএনজি অটোরিকশার জমা ৯০০ টাকা কার্যকরের দাবি ৬ মাস ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল থাই নারীর সঙ্গে হোটেলে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত : প্রধান উপদেষ্টা মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যসহ নিহত ২ জাহাজে ৭ খুন: বিচারের দাবিতে কর্মবিরতিতে নৌযান শ্রমিকরা পঞ্চগড়ে টানা চারদিন দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ইয়েমেনের বিমানবন্দরে হামলা, অল্পের জন্য বাঁচলেন ডব্লিউএইচও প্রধান গান পাউডার ব্যবহার হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে ‘বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ’ পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী পাবনায় দাঁড়িয়ে থাকা করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন শ্রমিক নিহত, আহত ৫ নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ ক্রীড়া পরিষদে অস্থায়ী অফিস ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেখানে চলবে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

প্রিয় মুখগুলো বাঁচাতে এককাতারে আসতে দোষ কোথায়?

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে
হারিয়ে যাওয়া তিন প্রিয় মুখ সময়ের আলো পত্রিকার খোকন, অপু ও ভোরের কাগজের আসলাম।

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা

গতরাতটি কেটেছে প্রচন্ড অস্থিরতায়।একেবারেই নির্ঘুম।প্রিয় মুখগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। কিভাবে আমরা একে একে ভোরের কাগজের আসলাম, সময়ের আলো পত্রিকার অপু ও খোকনকে হারিয়ে ফেললাম। ওরা আর আসবে না।কিন্ত ওদের মৃত্যু আমাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।একজন সাবেক নেতা হিসাবে এর কিছুটা দায় আমিও নিলাম। আর যারা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন কিম্বা স্বগোত্রীয় যেসব বিগ ব্রাদাররা টিভি চ্যানেলগুলোতে হরেক রকম অঙ্গভঙ্গি করে জাতিকে জ্ঞান বিলান- তারা এর কোন দায় না না নিলেও এ নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ বা আফসোস কোনটাই নেই।

তবে আমার বিবেকের দংশন আমৃত্যুই থেকে যাবে, এই ভেবে যে- এসব স্নেহমাখা মুখগুলোকে আমরা ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে পারিনি। অর্থের অভাবে এরা নিজের রোগ পর্যন্ত গোপন করে গেছে পরিবারের কাছে।যে দু’টি গণমাধ্যমের এই প্রিয়মুখগুলো চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিত্তশালী। এরপরও এসব হাউজে নিয়মিত বেতন নেই। ওয়েজবোর্ডের সকল সুযোগ সুবিধা নিলেও এসব পত্রিকায় নামমাত্র বেতন কিম্বা থোক বেতন দিয়ে সাংবাদিক পোষা হয়। করোনায় ধুঁকে ধুঁকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেওয়া এই তিন প্রিয়মুখই ওয়েজবোর্ড অনুযায়ি বেতন পেতনা এবং যাও পেত তা ছিল অনিয়মিত। আমি যতটুকু জানি সময়ের আলো পত্রিকার মালিকের হাজার হাজার কোটি টাকার জমি ও হাউজিং ব্যবসা। প্রতিদিন তিনি নাকি হাজার খানেক মানুষকে বিনা পয়সায় খাওয়ান।ধর্মেকর্মেও মাশাআল্লাহ।অথচ তার হাউজ সময়ের আলোতে কি নির্মমভাবে সাংবাদিকরা নিষ্পেষিত। করোনার সময় একরকম বাধ্য করা হয়েছে সকলকে অফিস করতে। আর এর চরম মূল্য দিতে হলো ওই হাউজের প্রিয় দুই মুখকে।যতটুকু জানি, ওই হাউজের করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও কয়েকজন সহকর্মী জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সবকিছু জেনেও এই পত্রিকাটির মালিক উদাসীন।

শুধু এই দু’টি পত্রিকাই নয়, প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকাতেই কমবেশি দু’চারজন করে করোনায় আক্রান্ত কিম্বা এসংক্রান্ত উপসর্গ বয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ সিংহভাগ গণমাধ্যম মালিক তার হাউজের আক্রান্ত সাংবাদিক-কর্মচারির কোন খোঁজই নেন না। এমনকি ঠিকমত বেতন পর্যন্ত দেওয়া হয়না। করোনাকালীন দু:সময়েও অধিকাংশ গণমাধ্যমে গত দুই মাস যাবত বেতন হচ্ছে না। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ৩ মাস, ৬ মাস, ৯ মাস, ২০ মাস এমনকি ২৬ মাসেরও বকেয়া রয়েছে। এই অবস্থায় একজন সাংবাদিক যেখানে তার পরিবার নিয়ে চলতে পারছে না, সেখানে যদি কোন সহকর্মীর করোনা উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে কিভাবে ওই সাংবাদিকটি এবং তার পরিবারের চিকিৎসা হবে? কারা তাদেরকে ডাক্তারের কাছে নেবে? তাদের জীবন বাঁচাতে কে এগিয়ে আসবে- এতসব প্রশ্নের উত্তর আমি মিলাতে পারিনা।

করোনার উপসর্গ নিয়ে ছটফট করা এক ছোট ভাই আমাকে জানিয়েছে, ভাই ৬ দিন ধরে আইইডিসিআর-কে ফোন করেও কাজ হচ্ছে না। তারা সেম্পল কালেকশনের কথা বলে আর আসে না। ওই ছোট ভাইটি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের শতাধিক গাড়ী রয়েছে। অথচ একটি গাড়ী দিয়ে যন্ত্রনায় কাতরানো তারই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষটিকে সেম্পল টেষ্ট করাতে নিয়ে যাওয়ার মত দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধটুকু পর্যন্ত অর্থবিত্তে অন্ধ হয়ে যাওয়া মালিকটির নেই। এরা চায় শুধু অর্থ আর অর্থ। এদের কোন মানবিকতা নেই। এদের সকল দান দখিনাই লোক দেখানো এবং এর মধ্যে দিয়ে এরা সমাজে তাদের কালো মুখগুলো আলোকিত রাখার প্রচেষ্টা চালায় মাত্র।

এছাড়াও করোনার উপসর্গ নিয়ে যন্ত্রনায় ভুগছেন এমন একাধিক সহকর্মী জানিয়েছে তাদের কষ্টের কথা, তাদের দু:খের কথা। তারা বলেছেন, বেতন নেই, ঘরে খাবারের টাকা নেই, ওষুধ কেনার পয়সা নেই; কিভাবে চিকিৎসা করাবো। কেউ খোঁজ নেয় না। মাঝে মধ্যে দু’চারজন সহকর্মী ফোন করে কেমন আছি জানতে চায়।এরকম একটি দু:সময়ে আমরা আর কতটা অসহায়ের মত হাত-পাপ গুটিয়ে বসে থাকবো? আমরা কি শুধু সহকর্মী মারা গেলে কিম্বা আক্রান্ত হওয়ার খবর পেলে ফেইসবুকে ওহ আহ করে কিছু শব্দের প্রয়োগ ঘটায়েই সব দায় শেষ করবো? এছাড়া কি আমাদের আর কোনই করনীয় নেই? একথাতো সত্য যে, আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য অনেক। কিন্ত আমরা তা ঠিকভাবে পালন করতে পারছি না।

কেন সরকার আমাদের কথা শুনবেন না। কেন সরকার মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকবেন।এটা হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকরা শক্তি এবং সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আওয়াজের কাছে সরকার, মালিকপক্ষ সব এককাতারে আসতে বাধ্য হবেন। এজন্য ঐক্যবদ্ধ একটি প্লাটফর্ম একেবারেই অপরিহার্য। যে প্লাটফর্ম থেকে খন্ডিত তালিকা হবে না, কিম্বা যে প্লাটফর্মের প্রতি সরকার এবং সাধারণ সাংবাদিক- সকলের একটি আস্থা তৈরি হবে। এসবই এখন সময়ের দাবি। বিলম্ব করলে আরও অনেক তরতাজা প্রাণের যবণিকা দেখতে হবে আমাদেরকে। আমি, এমনকি আপনিও হারিয়ে যাওয়া ওই তিন প্রিয় মুখের মতো ছবি হয়ে যেতে পারি।

তাই আসুন, গণমমাধ্যমের মালিকদের বাধ্য করি বেতনসহ বকেয়া পরিশোধে। প্রয়োজনে সরকারের সাথে আরও জোড়ালো আলোচনা করে এমন প্রজ্ঞাপন জারি করাই যে, চলতি মাসসহ টানা তিন মাসের বেতন পরিশোধের সিট যেসব পত্রিকা দেখাতে ব্যর্থ হবে তাদের সরকারি বিল পরিশোধ করা হবে না। একইভাবে টিভি চ্যানেল মালিকদের উদ্দেশ্যে বলতে হবে- চলতি মাসসহ টানা তিন মাসের বেতন পরিশোধের সিট দেখাতে না পারলে আপনার প্রতিষ্ঠানের অনুমতিপত্র বাতিল করা হবে।

প্রিয় সহকর্মী ও তার পরিবারকে বাঁচাতে, সহকর্মীদের চাকুরিচ্যুতি ঠেকাতে সরকারের এতটুকু নির্দেশনা আমাদের আদায় করতেই হবে। আর তা করতে যদি গোটা সাংবাদিক সমাজকে এককাতারে আসতেই হয়- দোষ কোথায়?

 লেখক:
সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

• সংগৃহিত: টাইমলাইন থেকে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com