জন জোসেফ মোরিঙ্গার যিনি সবার কাছে জে আর মোরিঙ্গার নামে পরিচিত। মোরিঙ্গার নিজেই বলেছিলেন, ‘ধাত্রী বাচ্চাকে নিয়ে বাড়িতে যায় না।’ অনুলেখকরাও অনেকটাই তাই। মোরিঙ্গার প্রিন্স হ্যারির সমস্ত স্মৃতিকথা, ‘স্পেয়ার’ এ তুলে এনেছেন। বইটি প্রকাশের পর ব্রিটিশ রাজ পরিবারের নানা ঘটনার আলোচনা, মোরিঙ্গার তির্যকভাবে বাস্তব ভুলত্রুটি রক্ষা করতে প্ররোচিত করেছে। টুইটারে তিনি প্রিন্সকে উদ্ধৃত করে বলেন, যিনি ‘স্পেয়ার’ এ বলেছেন তার নিজের সত্যটি ‘তথাকথিত বস্তুনিষ্ঠ তথ্য’ এর মতোই বৈধ। ‘স্পেয়ার’ এ হস্তক্ষেপ করার জন্য মোরিঙ্গারের আগ্রহ এ সত্যটিকে প্রতিফলিত করতে পারে, কাজটি প্রিন্স হ্যারির মতোই করা তার।
কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা ও জোরোশোরে প্রচারণার পর প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে তার জন্মস্থান যুক্তরাজ্যে বিক্রি শুরু হয় । বাজারে আসার আগেই বইটিতে দেওয়া প্রিন্স হ্যারির তথ্য নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে বইটি প্রকাশের পর পাঠকের চাপ সামলাতে লন্ডনে বইয়ের দোকানগুলো মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখতে হচ্ছে। প্রিন্স হ্যারির বইটি ১৬টি ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে। গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি প্রি-অর্ডার পাওয়া বইয়ের তালিকায়ও নাম লিখিয়েছে ‘স্পেয়ার’।
রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে এই বইয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন প্রিন্স হ্যারি। শুধু তাই নয় ৪১৬ পৃষ্ঠার বইটিতে তুলে ধরেছেন তাৎপর্যপূর্ণ ও চমকপ্রদ তথ্য। নিজের স্মৃতিকথায় ব্রিটিশ রাজপরিবারের নানা কলহের বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি, সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব পালনকালে ২৫ আফগান নাগরিককে হত্যার কথা জানিয়েছেন ডিউক অব সাসেক্স।
স্পেয়ারের ভেতরের তথ্য নিয়ে আলোচনার মাঝেই আরও একজনকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তিনি হলেন প্রিন্স হ্যারির বইয়ের নেপথ্য লেখক জে আর মোরিঙ্গার।
১৯৬৪ সালে নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন মার্কিন এই সাংবাদিক। নিউইয়র্ক টাইমস দিয়ে তার সাংবাদিকতা শুরু হয়। ২০০০ সালে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এ ফিচার লেখার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেন। দাসদের বংশধর ও জনবহুল অ্যালাবামার একটি বিচ্ছিন্ন নদীকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন তিনি।
২০০৫ সালে মোরিঙ্গার রচিত স্মৃতিকথা ‘দ্য টেন্ডার বার’ প্রকাশ পায়। বইটিতে তার শৈশবের চ্যালেঞ্জ, মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও তার সংগ্রাম করা নিয়ে কথা বলেন তিনি। সেই বইটি সে বছর বেস্ট সেলার ছিল। এই বইটির ওপর ভিত্তি করে ২০২১ সালে জর্জ ক্লুনি একটি সিনোমাও নির্মাণ করেন এবং এতে বেন অ্যাফ্লেক কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
একটি হারিয়ে যাওয়া ছেলের তার সত্যিকারের সন্ধান করার বর্ণনা আন্দ্রে আগাসির নজর কেড়েছিল। নব্বইয়ের দশকের একজন টেনিস তারকা এই আগাসি যিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তিনি মোরিঙ্গারকে তার স্মৃতিকথা লেখার অনুরোধ করেছিলেন। আগাসির মুখোমুখি হয়ে মোরিঙ্গার প্রায় ২৫০ ঘন্টা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। এমনকি তিনি টেনিস খেলোয়াড়ের কাছাকাছি থাকার জন্য লাস ভেগাসেও চলে যান। মোরিঙ্গারের এই কৌশল মনোবিশ্লেষণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য বহন করে বলে মনে হয়।
প্রিন্স হ্যারি তার স্মৃতিকথার স্বীকৃতিতে মোরিঙ্গারকে তার ‘স্বীকারকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘স্পেয়ার’ এর মতো আগাসির বই, ‘ওপেন’ আশ্চর্যজনকভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। দেখা গেলো, উইম্বলডন বিজয়ী টেনিসকে ঘৃণা করেন। এরকম আরও চমকপ্রদ তথ্য দেওয়া হয় এতে।
মোরিঙ্গার পরে নাইকির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইটকে তার স্মৃতিকথা ‘শু ডগ’ লিখতে সাহায্য করেছিলেন, যিনি এখন একজন বিলিয়নিয়ার।
‘স্পেয়ার’ বইতেও প্রচুর পরিমাণে চমকপ্রদ তথ্য আছে। প্রিন্স হ্যারির প্রকাশক পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউস নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিল মোরিঙ্গার প্রিন্সের স্মৃতিকথা লেখার জন্য উপযুক্ত লেখক। নেহাতই, হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনি মোরিঙ্গারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রিন্স হ্যারির।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ