বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
সোমবার সচিবালয়ের আইন মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এই দাবি জানান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ।
আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, সদস্য সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মধুসূদন মণ্ডল। এ সময় তাঁরা নিজেদের লিখিত মতামত মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা ডিজিটাল এজেন্সি ও সম্প্রচার কমিশনের কর্মপরিধি সাংঘর্ষিক হবে বলে নিজেদের আশঙ্কার কথা জানান সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলেন, ডিজিটাল মহাপরিচালক গণমাধ্যমের প্রতিকৃতি সম্পর্কে না জানলে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আইনটি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেন তারা। এসময় নতুন এজেন্সির বদলে বিটিআরসির অধীনে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা দল) গঠনের পক্ষে মত দেন।
এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের নামে যে হাইপ্রোফাইল কমিটির চিন্তা করা হয়েছে, তার বৈঠক করাই কঠিন হয়ে যাবে বলেও মত দেওয়া হয় লিখিত প্রস্তাবে। ফলে এই কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত আইনটির ৩১ ধারার ব্যাপক অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করে সাংবাদিক নেতারা এই ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধের সব পথ রুদ্ধ করার প্রস্তাব করেন।
আইনটির ৩২ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তির কথা বলা হলেও এ সম্পর্কে প্রচলিত আইনেই সাজা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন আইনের প্রয়োজন কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেইসঙ্গে সাংবাদিকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির পার্থক্য নিরূপণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।
আইনের এই ধারাটির বিষয়ে বিএফইউজে নেতারা প্রস্তাব করেছে যে, এই আইনের কোনো ধারা সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের প্রতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনো সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করা যাবে না। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে এ বিষয়ে একটি সেল থাকবে, সেই সেলে অভিযোগ করা যাবে। সেই সেলের অনুমোদন সাপেক্ষেই কেবল মাত্র কোনো সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগ করা যাবে। সেলের অনুমোদন ছাড়া সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বেলায় এই আইন প্রয়োগ করা যাবে না।
২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রচারণার যে দণ্ডের কথা বলা হয়েছে, তাতে এই ধারাটির রাজনৈতিক বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
এই ধারা সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত কথাগুলো সংযুক্ত করা উচিত বলে তাঁরা প্রস্তাবনা রাখেন। সাংবাদিক নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আরো স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করা উচিত। ধর্মীয় বা কোনো বিশ্বাসের, সম্প্রদায়ের বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয়টি এ ধারাতেই স্পষ্ট করা উচিত।
বৈঠক শেষে বিএফইউজের সভাপাতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব পেশ করেছি। আইনটির বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি, তিনি (আইনমন্ত্রী) আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, আগামী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব মতামত তুলে ধরা হবে এবং সেখানে আইনটি যেন অগণতান্ত্রিক না হয়, তা পর্যালোচনা করা হবে।’
এবিষয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রস্তাব পেয়েছি। পরবর্তী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে, সম্পাদক পরিষদের সদস্য, সাংবাদিক নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেখানে তাঁরা এই মতামতসহ আরো কোনো বক্তব্য থাকলে তা তুলে ধরবেন। এই আইনটি করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য। এ আইনের যেন অপব্যবহার না হয়, যে ধারাগুলোর ব্যাপারে আপত্তি আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এমনভাবে আইনটি করা হবে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তাও যেন নিশ্চিত হয়।’
বাংলা৭১নিউজ/জেএস