বাংলা৭১নিউজ, শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্র সিরাজগঞ্জ ও বিন্দু শাহজাদপুরের শত শত প্রসেস মিল থেকে নির্গত সোডা, সাবান, হুইল পাউডার, নিসপেল তেল, কস্টিক, মাসরাইজ্ড ওয়েল, ব্লিচিং পাউডার, নীল, গ্লেসসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বর্জ্যে মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে করতোয়া নদী। এছাড়া করতোয়া নদী তীরবর্তী বিভিন্ন খাল,বিল,ডোবা,পুকুর ও জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দূষিত ঐ পানি। দূষিত পানির দুর্গন্ধ ক্রমেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ দূষিত করে তুলছে । ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর মতো উত্তরাঞ্চলের অন্যতম করতোয়া নদীর পানি ক্রমাগত কালচে বিবর্ণ রূপ ধারণ করছে। এতেমারাত্মকভাবে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের অগণিত সূতা প্রক্রিয়াজাতকরণ এসব প্রসেস মিলকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত বিষাক্ত পানি এ এলাকার নদী-নালা, খাল, বিল, ডোবা ও জলাশয়ের পানি দূষিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের করতোয়া নদী তীরবর্তী বিস্তৃর্ণ এলাকার জীববৈচিত্র ও মারাত্মক হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। ফসলি জমিতে সেচকার্জে এসব পানি ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগসহ নানা রোগবালাই। করতোয়া পানির ওপর নীর্ভরশীল জনমানুষ, পশুপাখিসহ প্রাণিকূলের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। মারাত্বক ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন ডাইং,প্রসেস মিল ও হাজার হাজার তাঁতীদের ব্যক্তিগত কারখানায় সূতা রং ও প্রসেসের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ট্যাংকে অপসারণ না করে সরাসরি ঐ দূষিত পানি করতোয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে করতোয়ার পানির রং বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে।
দূষিত এসব প্রসেস মিলের বর্জ্য করতোয়া, শাখানদী হুরাসাগর, রূপনাইসহ ডোবা,নালা,খাল,বিল মাছের বসবাসযোগ্য পরিবেশ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এসব দূষিত পানি ব্যবহারে এলাকাবাসীর মধ্যে চর্মরোগসহ নানা ক্ষতিকারক রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। দূষিত পানি পান করে পশু পাখির জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, “তাঁত সমৃদ্ধ এ জনপদের শত শত প্রসেস মিলের বর্জ্য নদী নালা-খাল বীল ডোবায় না ফেলে পরিকল্পিতভাবে ট্যাংকে অপসারণের ব্যবস্থা করা হলে একদিকে যেমন নদীনালা খাল বিল ডোবা পুকুর ও জলাশয় দূষণের হাত থেকে রেহাই পাবে,অন্যদিকে জীববৈচিত্র ও দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাবমুক্ত হবে।
এজন্য অবিলম্বে তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের অগণিত ডাইং কারখানা, প্রসেস মিলসহ রং সূতা প্রকিয়াজাতকরণ সকল কারখানার কেমিকোল মিশ্রিত দূষিত পানি অপসারণে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। ” আজ (শনিবার) বিকেলে করতোয়া নদী তীরবর্তী শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের নগরডালা এলাকা পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানায়, নোংড়া ও পঁচা পানির দুর্গন্ধে আশেপাশের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করতোয়ার পানি দূষিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন। স্থানীয় তাঁতী নেতৃবৃন্দ ও তাঁতীরা জানিয়েছেন, দেশের তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ জনপদ শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জে শত শত ডাইং, প্রসেস মিল ও হাজার হাজার ব্যক্তিগত সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। একেকটি ডাইংয়ের প্রতিটি বয়েলে দিনে প্রায় ৪শ বান্ডিল সূতা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ঐ ৪শ’ বান্ডিল সূতা প্রক্রিয়াজাত করতে বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের কেমিকোল ও পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার এ অঞ্চলে গড়ে ওঠা হাজার হাজার তাঁত কারখানায় সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এসব ডাইং, প্রসেস মিল ও তাঁতীদের ব্যক্তিগত সূতা প্রক্রিয়াজাত কারখানায় সোডা, সাবান, হুইল পাউডার, নিসপেল তেল, কস্টিক, মাসরাইজ্ড ওয়েল, ব্লিচিং পাউডার, নীল, গ্লেসসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। পানিতে এসব কেমিক্যাল মিশ্রণ করে ও ক্ষেত্র বিশেষে বয়েল পানির সাথে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এলাকাবাসী ওই পানি দুষণের রাহুগ্রাস থেকে জীববৈচিত্রর সুরক্ষায় ও করতোয়া নদীকে ভয়াবহ দূষণমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস