পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পরই লেনদেনের পালে হাওয়া লেগেছে।
আগের দিন বুধবার প্রায় তিন মাসের মধ্যে (১০ মে’র পর) সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়ার পর বৃহস্পতিবারও (৪ আগস্ট) দিনের শুরুতে লেনদেনে বেশ ভালো গতি দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে সূচকও রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী ধারায়।
এদিন প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৪ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বেশি। তবে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তারচেয়েও বেশি।
শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি।
তবে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে আসার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৮ জুলাই বিনিয়োগসীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়ে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণে ক্রয়মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দামের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
রোববার থেকে কার্যকর হয় এ ফ্লোর প্রাইস। এতে দাম সমন্বয় করায় রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। আর লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এতে টানা পতন থেকে বেরিয়ে একদিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ১৫৩ পয়েন্ট।
সোমবারও শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারার দেখা মিলে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ৩০ পয়েন্ট বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে ৯১২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। একইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার লেনদেনের শেষ দিকে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। এতে একদিকে লেনদেনের গতি বাড়ে, অন্যদিকে সূচকের বড় উত্থান হয়।
অবশ্য মঙ্গলবার রাতেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকে। এতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের আধাঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ১০৩ পয়েন্ট। তবে শেষদিকে বিক্রির চাপ বাড়ায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৫০ পয়েন্ট।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে লেনদেনের শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৫ পয়েন্ট। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনের গতি বাড়লেও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাড়েনি।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেলা ১১টা ১৮ মিনিটে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৮টির এবং ৬৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে দশমিক ৮১ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বেড়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৬৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ