বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাতিলের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দিয়েছে এ বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কমিটি। কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানিয়েছেন নবম থেকে ১৩তম বেতন গ্রেডের নিয়োগে কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ তারা জমা দিয়েছেন।
সোমবার সচিবালয়ে কমিটির আহ্বায়ক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগের যে দ্বিতীয় বা প্রথম শ্রেণী বলা হতো, সেগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না। মানে ৯ থেকে ১৩ গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোনো কোটা থাকবে না। এই প্রস্তাব আজকে আমরা সাবমিট করেছি।’
শফিউল আলম বলেন, ‘এটার প্রসেসটা হলো, এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক অনুমোদন গ্রহণ করা হবে। অনুমোদনের পরে এটা কেবিনেটে উপস্থাপিত করা হবে। পরবর্তী কেবিনেট বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। কেবিনেট পাস করে দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে যাবে।’
সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরকেও দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনিদেরকেও দেয়া হয়। আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থীরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়।
তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্রুয়রিতে শুরু হয় আন্দোলন। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানায়।
গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন কোনো কোটা থাকবে না। তবে গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এখন এটি বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন।
কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারার পর তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি মামনুন রহমান এবং বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের এই রায়ে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ (কোটা) অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।’ রায়ে আরও বলা হয়, ‘কোনো ক্ষেত্রে কোটা পূরণ যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে পদ খালি রাখতে হবে।’
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু অংশ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দেয়। আপিলের রায়েও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের (কোটা) বিষয়টি বহাল রাখা হয়।
গত ১৪ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে শফিউল আলম বলেছিলেন, ‘কোটা নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আমরা মেরিটকে (মেধা) প্রাধান্য দিয়ে অলমোস্ট (প্রায়) কোটা উঠিয়ে দেয়ার সুপারিশ করব।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ রয়েছে সে বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। তারা বলেছেন যে, এটা যেহেতু সরকারের পলিসি ডিসিশন, এটা আদালতের রাইটস স্পর্শ করবে না, কোনো সমস্যা নেই।’
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে করা এক প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা ওটা যাচাই-বাছাই করে দেখে বলেছি যে, এখন কোটা না হলেও চলতে পারে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সূত্র: ঢাকাটাইমস।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস