বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির ক্ষমতায় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলটি পুনরায় ক্ষমতায় এলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীরা গতবারের মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনি। তবে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে বিজেপি সরকারের কাছে প্রত্যাশার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মে) সকালে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা শুরুর পর থেকেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার (এনডিএ) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার আভাস মেলে। সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির ভারতপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দিলেও ভারতের নির্বাচন নিয়ে টু শব্দও করেননি।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করবো না। মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি।’
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ভারতের জনগণের ভোটে নির্বাচিত দল হিসেবে বিজেপি সরকার গঠন করতে যাচ্ছে এ জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে অভিনন্দন। সকার প্রধান হিসেবে দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এজন্য তাকেও অভিনন্দন। তার দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের কাছে প্রত্যাশা- ভারতের সঙ্গে যে অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে, যা তিনি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা করবেন। তিস্তার সমাধান চাই, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের সুযোগ চাই। সীমান্তে হত্যার জিরো টলারেন্স দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ভারতের জনগণের রাজনৈতিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। শুধু ভারত নয়, জনগণের ইচ্ছায় যে কোনো দেশের সরকার গঠন হবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের প্রায় তিন দিকে ভারত। ভারত বেষ্টিত বাংলাদেশের জনগণ যেন ভারতের মতোই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের জনগণ যেন তাদের ইচ্ছায় সরকার বেছে নিতে পারে এবং সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দ্রুত সময়ে তাদের ইচ্ছে মতো সরকার গঠন করতে পারে এ ব্যাপারে অন্য দেশের সরকারের মতো ভারতও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে। এটাই নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা করি।
বিএনপির সহ আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনে মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, কারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তা নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয়। আমাদের কথা সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান চাই। এটা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক। তিস্তার পানি, ৫৪ অভিন্ন নদী ন্যায্য হিস্যা, বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাপার রয়েছে। তাদের ফারাক্কা বাঁধের কারণে বিস্তৃণ অঞ্চল মুরুভূমি হয়েছে, সীমান্ত হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও আমাদের নতজানু পরাষ্ট্রনীতি ও সরকার থাকার কারণে সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদ সেভাবে হচ্ছে না। বারবার বলা সত্ত্বেও ভারত এ ব্যাপারে উদাসীন।
তিনি বলেন, আসাম থেকে বাঙালি খেদাও বলে তারা যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে ভারত যেন মনে রাখে বাংলাদেশ তাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং নিশ্চয়ই তারা দুইপাশে পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে চায় না। ভারতকে বুঝতে হবে বাংলাদেশে যথেষ্ট ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। ভারত যদি বিষয়গুলো বিবেচনায় না নেয়, পরবর্তীতে ভারতের জন্য খুব একটা ভালো হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিজেপির জয়ের সম্ভাবনায় প্রটোকল ভেঙে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবীর খান দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার অভিনন্দন বার্তা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পৌঁছে দিতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে যান। এছাড়া বিজেপির বিজয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত বিজেপি সরকারের কাছ থেকে কোনো ফায়দা নিতে পারেনি বিএনপি। তাই এবার বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের সম্ভাবনা ঘিরে গতবারের ছিটোফোঁটা উচ্ছ্বাসও দেখা যায়নি বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বাংলা৭১নিউজ/এস.এ